দেড় যুগ ধরে বাড়ির দরজাতে আছেন লাইলী বেগম

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় প্রায় দেড় যুগ ধরে এক বাড়ির দরজাতে আছেন লাইলী বেগম (৬০) । ওই দরজাতেই চলছে তাঁর থাকা, খাওয়া, গোসল, ঘুমানোসহ সব কাজ। আগে পৃথিবীর আলো দেখতে পেলেও এখন আর চোখে দেখন না । এমনকি নিজের সমন্ধে কাউকে কিছু বলতেও পারেন না।
লাইলী বেগম থাকেন গার্মেন্টস মালিক রানার শহরের কয়ানিজপাড়ার বাড়ির দরজায়। তাঁর এখানে বাস করার সঠিক কারন বলতে না পারলেও স্থানীয়রা জানান, তারা প্রায় দেড় যুগ ধরে লাইলী বেগমকে এভাবেই দেখছেন।
বাড়ি মালিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাইলী বেগমের বিয়ে হয় এ এলাকার আরিফুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলামের সাথে।বিয়ের পরই দূর্ঘটনায় তাঁর স্বামীর মারা যায়। এরপর শ্বশুরবাড়িতে তার আর জায়গা হয়নি। তার কোন সন্তানও নেই। তাঁর বাবার বাড়ি উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ গ্রামে। ছোটবেলাতেই বাবা সিরাজুল ইসলাম মারা যান। আর মাকে হারান ১৪ বছর বয়সে। আপনজন বলতে আছে তার ভাই মনোয়ার ইসলাম। পেশায় রিকিশাচালক। দীর্ঘদিন ধরে তারও কোন খোঁজ-খবর নেই।
এলাকাবাসী জানান, প্রথম দিকে তিনি থাকতেন একই এলাকার ভাঙ্গা এক বাড়ির চালাবিহীন বারান্দায়। তাঁর এমন কষ্ট দেখে রানা গার্মেন্টসের মালিক রানা ইসলাম তার বহুতল বাসভবনের প্রধান দরজায় তাঁকে থাকতে দেন। ২০০৩ সাল থেকে এভাবে এখানেই আছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ মে ) সরেজমিন কয়নিজপাড়া এলাকার ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িটির দরজার এক পাশে উপর দিকে টাঙানো দড়িতে কয়েকটি কাপড় ঝুলছে। আর কাপড়গুলোর নিচে সিঁড়িতে শুয়ে আছে লাইলী বেগম।
ওই বাড়িটির সামনের মুদি দোকানদার জিয়া বলেন, ‘আমি এ দোকান করার পর থেকেই ওই অন্ধ মহিলাকে এখানে দেখছি। রোদ,ঝড়-বৃষ্টিতেও তিনি এ বাড়ির দরজাতেই থাকেন। আমি তাকে সকালের নাস্তা খেতে দিই। আর অন্যান্য সময় কেউ দিলে তার খবার জোটে তানাহলে না খেয়েই থাকেন।
ওই এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিলকিস বানু বলেন, তিনি এখানে দিন-রাত এভাবে থাকাতে এলাকায় কোন চুরির ঘটনা ঘটে না। চিকিৎসা করানো গেলে হয়ত তিনি আবার চোখে দেখতে পাবেন।
এ অবস্থাতেও লাইলী বেগমের ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতা। সৈয়দপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জোবায়দুল ইসলাম মিন্টু বলেন, লাইলী বেগমের জন্মনিনন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র না পাওয়ায় ভাতার ব্যবস্থা করা যায়নি। জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসিম আহমেদ বলেন, একজন মানুষ বাড়ির দরজাতে জীবন কাটাবে, এটা খুব বেদনাদায়ক। বিষয়টি তাঁদের নজর আসেনি। তাঁর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার নূর মোহাম্মদ বলেন, দরজায় জীবন কাটানোর বিষয়ে তাঁরা জানতেন না। খোঁজ নিয়ে অন্ধ ওই নারীকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হবে। সমাজসেবা কার্যালয় তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।