রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

ধুনটে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ প্রতীমা ভাংচুর

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার ধুনটে দুর্বত্তরা টেংরাখালি জেলে পাড়া রাধাগোবিন্দ মন্দিরে হামলা চালিয়ে স্বরসতি মুর্তি ভাংচুর ও সামিয়ানার কাপড়ে অগ্নি সংযোগ করেছে। সোমবারবার গভীর রাতে মন্দিরের অগ্নি সংযোগ ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। টেংরাখালি জলমলকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে ঘনটনাটি ঘটতে পারে বলে স্থানীয় হিন্দু পরিবারের সদস্যরা ধারনা করেছেন।
টেংরাখালি মৎস্যজিবি সমবায় সমিতির সভাপতি নিমাই চন্দ্র হাওলদার অভিযোগে করে বলেন, ৪২ একর আয়তনের টেংরাখালি জলমহলটি অবৈধ ভাবে নিতিমালা বহিরর্ভুত ভাবে ১৪২৪-২৯ বঙ্গাব্দ মেয়াদে জলমহল থেকে ৬/৭ কিলোমিটার দুরের পেঁচিবাড়ি মালোপাড়া ধীবর মৎস্যজিবি সমবায় সমিতিকে লীজ দেওয়া হয়। এরপর পেঁচিবাড়ি মলোপাড়া মৎস্যজিবি সমিতি ওই জলমহলটি আব্দুর রউফ খান নামের এক ব্যাক্তিকে অবৈধ ভাবে সাব-লীজ দেয়। আব্দুর রউফ খান এলাকার কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে জলমহলটি ভোগদখল শুরু করায়, আমি হাই কোটে ৭৬৪৩/২০১৭ নং মামলা দায়ের করি। আদালত ২০১৯ সালে সরেজমিনে তদন্ত করে সাবলীজ প্রমানিত হলে লীজ বাতিল করে প্রকাশ্যে টেন্ডার দেওয়ার জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। বগুড়া জেলা প্রশাসক ২০১৯ সালের ২৩ জুন সরেজমিনে তদন্ত করে সাব-লীজ প্রমান পেয়ে একই বছর ১১ জুলাই জেলা জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় টেংরাখালি জলমহলের লীজ বাতিল সহ জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করেন। এরপর পেঁচিবাড়ি মালোপাড়া মৎস্যজিবি সমবায় সমিতির পক্ষে বগুড়া জেলা প্রশাসক ও আমাদের সমিতির সভাপতি সাধারন সম্পাদক সহ ১০ জনকে বিবাদী করে বগুড়া সহকারী জজ আদালতে ২৮০/১৯ অন্য একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিধোজ্ঞা দেন। এরপর পেঁচিবাড়ি ধীবর মৎস্যজিবি সমিতির পক্ষে অধিকতর তদন্তের জন্য ভুমি মন্ত্রনালয়ে একটি অভিযোগ দেয়। ভুমি মন্ত্রনালয় অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহি বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দিলে, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হুমায়ন কবির খোন্দকার সরেজমিনে তদন্ত করে টেংরাখালি জলমহলটি সাবলীজ দেওয়ার সত্যতা প্রমান পেয়ে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারী ভুমি মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন দেন।
নিমাই হওয়ালদার আরো জানান, পরবর্তীতে আমি ২৮০/১৯ নং মামলার ৭ নং বিবাদী হিসাবে হাইকোটে আপীল দায়ের করার পর ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারী হাইকোট ওই মামলাটির অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেন। এরপর বগুড়া জেলা প্রশাসক সারকারী স্বার্থরক্ষার জন্য টেংরাখালি জলমহলটি খাস আদায় করার জন্য ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন। ধুনট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর পারলক্ষিপুর সুলতান হাটা মৎস্যজিবি সমিতিকে দায়িত্ব দেয়। আমরা পারলক্ষিপুর সুলতান হাটা সমিতি পক্ষ হয়ে দিন হাজিরা চুক্তিতে মাছ ধরার কাজ করি। এতে আব্দুর রউফ খানের সহযোগী খোকা ফকির, তোতা ফকির, মান্নান, কামাল, আলতার, লিটন সহ ১০/১৫ জন এলাকার সন্ত্রাসী আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আমাদেরকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায়। গত ১৩ ডিসেম্বর পেঁচিবাড়ি মালো পাড়া ধীবর সমিতির পক্ষে বগুড়া জেলা জজ আদালত থেকে আবারও অস্থায়ী নিষেজ্ঞার আদেশ নিয়ে টেংরাখালি জলমহলটি জবর দখল করে। এরপর আমি টেংরাখালি সমিতির পক্ষে হাইকোটে আপীল করলে আদালত চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারী অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন। কিন্ত আদালতের আদেশ অমান্য করে ওই সন্ত্রাসীগন টেংরাখালি জলমহলটি নিজেদের দখলে রাখেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানানোর পরে স্থানীয় প্রশাসন গত দুই মাসে তেমন কোন পদক্ষেপ নেন নি। গত সোমবার বিকালে ধুনট এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার সাইফুল ইসলাম লোকজন নিয়ে সরেজমিনে টেংরাখালি জলমহলে গিয়ে খোকা ফকির, তোতা ফকির, কামাল, আলতাব সহ অবৈধ দখলকারীদের নিষেধ করেন এবং তাদের নৌকা গুলো ডুবিয়ে দেন।
টেরাখালি মৎস্যজিবি সমিতির সাধারন সম্পাদক বলরাম হাওয়াদার জানান, এসিল্যন্ড অফিসের লোকজন চলে যাওয়ার পর খোকা ফকির তার সহযোগীদের নিয়ে লাঠি সোড়া ছুরি, ফালা নিয়ে নৌকা তুলে রাতভর মাছ মারে এবং আমাদেরকে নানা রকম হুমকি দেয়। আমার ভয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে দেখি আমাদের রাধা গোবিন্দ মন্দিরের ভেতর আগুন জ¦লছে এবং মর্তি ভাংগা। আমাদের চিৎকারে ওই সন্ত্রাসীরা চলে যায়। বলরাম আরো জানান, ইতিপুর্বে খোকা ফকির সহ তাদের সহযোগীরা আমাদের গ্রামে অগ্নি সংযোগ ও হামালা করেছে।

মন্দির কমিটির সভাপতি খোকা চন্দ্র হাওয়ালদার জানান, মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি, আমারা গ্রামের সবাই পরামর্শ করে থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সংবাদ পেয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুইয়া, আতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত, ওসি কৃপা সিন্ধ বালা সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের আশ^াস্ত করেছেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button