জাতীয়দুর্যোগলিড নিউজ

ক্যাসিনো সেলিমকে নিয়ে গুলশানে র‌্যাবের অভিযান

অনলাইন ক্যাসিনো গুরু সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় থাই এয়ারওয়েজের ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইট থেকে তাকে গ্রেফতার করে নামিয়ে আনা হয়।

সেলিম প্রধানকে নিয়ে সোমবার রাতভর রাজধানীতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। রাত ১০ টার দিকে গুলশান ২ এর একটি বাড়িতে অভিযান শুরু করে।পরে আরও কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানো হয়।

গুলশান ২–এর ৯৯ নম্বর সড়কের ১১ /এ নম্বর মমতাজ ভিশন বাড়িতে রাত ১০টার দিকে প্রথমে র‍্যাবের তিনটি গাড়ি আসে। কয়েকজন র‍্যাব সদস্য বাড়িটির নিচে অবস্থান নেন। এরপর বাড়িতে বাইরে থেকে কোনো মানুষকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বাড়িটি ছয় তলা। এর চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় অভিযান চালানো হয়। এ দুটি ফ্লোরে তার বাসা ও অফিস রয়েছে। সোয়া ১১টার দিকে অভিযানস্থলে র‍্যাবের সদস্যের উপস্থিতি আরও বাড়ানো হয়।

র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, একটি অফিসের যে ধরনের ডেকোরেশন থাকা দরকার সেখানে এ ধরনের ডেকোরেশন আছে। তবে র‌্যাব সদস্যরা সার্চ করে দেখছেন কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, অনলাইনে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা সেলিম প্রধানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

অনলাইন ক্যাসিনো থেকে আয়ের অর্থ তিনি জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করতেন। গুলশানে তার একটি স্পা সেন্টার রয়েছে। সেখানেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে।

সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সহ-সভাপতি।এছাড়া এর আগে গ্রেফতার হওয়া বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ক্যাশিয়ারও।

সেলিম প্রধানের ব্যাংককের পাতায়ায় বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম প্রধান রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জাল টাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে তিনি খাটাল, মাদক ও জাল টাকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা নেন। দুই বছরে তিনি সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন।

বুধবার রাতে ফুওয়াং ক্লাবে সর্বশেষ অভিযান হয়। এরপর থেকে গত কয়েক দিন তেমন কোথাও অভিযান পরিচালিত হয়নি। সোমবার অনলাইন ক্যাসিনো গুরু সেলিম প্রধান গ্রেফতার হন।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরওয়ার বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোর বাংলাদেশ প্রধান সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি জুয়ার টাকা সংগ্রহ করতেন।

পরে এই অর্থ তিনি বিদেশে পাচার করতেন। এসব বিষয়ে এখন তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটটি দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট ফ্লাইটে হাজির হলে সেটি বেলা ৩টায় ঢাকা ছেড়ে যায়। সেখান থেকেই সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করা হয়।

সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের কারণে ভয়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। তবে র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা তার ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছিলেন। এ কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি পালাতে পারেননি।

র‌্যাব জানায়, রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার চলে। এটি খেলতে কোনো ক্লাবে যেতে হয় না। নিজের মোবাইল ফোনে জুয়া খেলে অনেকেই সব হারাচ্ছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অনলাইন ক্যাসিনোর ডিলার।

তাদের কাছ থেকে বিকাশ, নগদ, রকেট কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে চিপস বা কয়েন কেনেন জুয়াড়িরা। ডিলারদের নিয়োগ দেন অনলাইন ক্যাসিনো গুরু সেলিম প্রধান।

তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ একাধিক আইনে মামলা করা হবে বলে জানায় র‌্যাব।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button