বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

বেঁধে দেওয়া হলো আইআইজি-এনটিটিএন সেবার দাম

সারাদেশে ইন্টারনেট সেবার দাম নির্দিষ্ট দেওয়ার পর এবার বেঁধে দেওয়া হলো আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও এনটিটিএন (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা) সেবার মূল্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই সেবার মূল্য বেঁধে দিয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এরফলে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবার মূল্য ‘এক দেশ এক রেট’ শতভাগ বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ অগ্রসর হলো।

এ বিষয় নিয়ে বিটিআরসি শনিবার (৭ আগস্ট) আইএসপিএবি ও আইআইজি ফোরামের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করে সরকারের সিদ্ধান্ত (সেবামূল্য বেঁধে দেওয়া) জানায়।

এর আগে দেশে প্রথমবারের মতো গত ৬ জুন সরকার তিনটি ক্যাটাগরিতে (৫, ১০ ও ২০ এমবিপিএস) ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেয়। তখন এর বাইরে ছিল আইআইজি ও এনটিটিএন খাত। ফলে এতদিন ইচ্ছেমতো সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হতো। এতে করে আইএসপি খাতে প্রকাশ্যে অসন্তোষ ছিল। তাই এবার দীর্ঘদিনের সেই অসন্তোষ দূর হতে যাচ্ছে।

ইন্টারনেটের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার সময় ঘোষণা করা হয়, শিগগিরই আইআইজি ও এনটিটিএন সেবার দাম বেঁধে দেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এই সিদ্ধান্ত।

জানা গেছে, এই দুটি সেবার দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হতে পারে।

আইআইজি ও এনটিটিএন সেবার দাম বেঁধে দেওয়া হলে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারীরা ভালো মানের সেবা পাবেন। এছাড়া দাম একই হওয়ার কারণে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মানের সেবা দিয়ে গ্রাহক ধরে রাখতে চাইবে। অপরদিকে ঢাকার বাইরের ডাটা প্রোভাইডার ও আইএসপিরা (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) বিশেষ সুবিধা পাবে যা প্রকারান্তরে গ্রাহকরা ভোগ করবে বলে জানান আইএসপি ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শনিবার (৭ আগস্ট) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এর আগে এন্ড ইউজারদের (ইন্টারনেট ব্যবহারকারী) জন্য মূল্য বেঁধে দিয়েছিলাম। এটা কোনও পূর্ণ চিত্র ছিল না এই খাতের জন্য। অন্যদিকে আইএসপিগুলো যে সেবা দেয়, তা আইআইজি ও এনটিটিএন অপারেটরের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রুত এই দুটো সেবার দাম বেঁধে দেওয়া। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সেবা পরিবহন মূল্যের যে প্রস্তাবনা পাঠায় তা আমরা দেখে অনুমোদন করে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা ‘এক দেশ এক রেট’ ঘোষণা করার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আইএসপির অভিযোগ পাচ্ছিলাম, এনটিটিএন ও আইআইজি সেবা মূল্য বেঁধে দেওয়া না হলে এই রেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। আশা করি এক দেশ এক রেট বাস্তবায়ন করতে আইএসপিগুলোর কোনও অসুবিধা হবে না।

জানা গেছে, আইআইজির জন্য বিভিন্ন ভলিউমে ১১টা স্ল্যাবে ব্যান্ডউইথের মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে এনটিটিএনগুলোর জন্য ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটির ভলিউম অনুযায়ী ১৫টি স্ল্যাবে সেবামূল্য বেঁধে দিয়েছে বিটিআরসি।

জানতে চাইলে আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিটিআরসি গত ১০-১২ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করছে। অবশেষে সফল হলো। এতে করে ব্যবহারকারীরা মান সম্মত সেবা পাবেন। বিটিআরসি একইসঙ্গে গ্রেড অব সার্ভিস নিশ্চিতের কথাও বলেছে। এসবের ফলে সারাদেশে ইন্টারনেটে ‘এক দেশ এক রেট’ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ অগ্রগতি হলো।

দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার এক দেশ এক রেট ঘোষণা করার পরও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে আইএসপিগুলো এই সেবা দিতে পারছিল না। তাদের ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিশন (পরিবহন) খরচ বেশি লাগত। সেবামূল্য বেঁধে দেওয়ার কারণে আইএসপিগুলো ঢাকার দামেই জেলা বা উপজেলায় ব্যান্ডউইথ পাবে। তাদের ট্রান্সমিশন খরচ কম পড়বে।

তিনি আরও বলেন, অনেক আইএসপি দুই বা তিন এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে নিতো। এখন আর এটা থাকবে না।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button