অর্থনীতি

কমছে সরবরাহ, বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাজারে চড়া দামি বিক্রি হয়ে আসছে চাল-ডালসহ বেশকিছু নিত্যপণ্য। এখন ভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ায় লকডাউন হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা। আগে থেকে কেনা পণ্যের মজুদও কমে আসছে। আবার ঘনিয়ে আসছে রমজান মাসও। এতে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই ভিড় করছেন ক্রেতারা। সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে এতে। নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা না থাকায় মোকামে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে পড়ছে। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলোতে পণ্যের সরবরাহ কমেছে। এ অবস্থায় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনিসহ বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম নতুন করে বেড়েছে। এর মধ্যে দ্বিগুণ বেড়ে আদার দাম পৌঁছেছে ৩০০ টাকায়। ভরা মৌসুমেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে রসুনের দাম।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের বাজারদরের তথ্যেও এমন চিত্র রয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে ১৫টি পণ্যের দাম পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে ডিম ও মুরগি ছাড়া সব পণ্যের দাম বেড়েছে। নতুন করে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। মসুর ও মুগ ডালের দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া কেজিতে পেঁয়াজ ১০ টাকা, রসুন ১০ থেকে ৪০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম। কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এখন।

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর বাজারের নাসির উদ্দিন ও কারওয়ান বাজারের ইউনুস মিয়া বলেন, মিলগুলোতেই গত এক সপ্তাহে চালের বস্তায় দাম ১০০ থেকে দেড়শ’ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া এখন পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এ কারণে বাজারে দাম বেড়েছে। তারা বলেন, মোকাম থেকে সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হলে দাম কমে আসবে। অন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, সম্প্রতি বাজারে ক্রেতা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ কারণে খুচরা দোকানিরা দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, পাইকারিতে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে।

খুচরায় সরু চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও মোটা চাল ৪২ থেকে ৫০ টাকায় পৌঁছেছে।বেড়েছে ডালের দামও। মানভেদে অ্যাঙ্কর ডালের কেজি এখন ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজির ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজির মুগ ডাল এখন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা হয়েছে। খেসারি ডালের কেজি গত দু’সপ্তাহে ৭০ থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। মসুর ডাল ১০ টাকা বেড়ে ছোট মসুর ১৩০ টাকা ও বড় মসুর ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে করোনা আতঙ্কে ৮০ টাকায় ওঠা পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে নেমেছিল। তবে তা দু-এক দিন স্থায়ী হয়। এর পরে আবার তা বেড়ে এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। এ ছাড়া রসুনের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে দেশি রসুন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা হয়েছে। যদিও এখন পেঁয়াজ-রসুনের ভর মৌসুম চলছে। কৃষক কম দামে বিক্রি করলেও ক্রেতাদের চড়া দাম গুনতে হচ্ছে। এখন সংরক্ষণযোগ্য পণ্যের দাম বাড়লেও সবজি, ডিম ও মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের পাইকারি মোকাম ফরিদপুর ও পাবনা অঞ্চলের বাজারগুলোতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ অনেক এলাকা লকডাউন থাকায় দেশি রসুনের সরবরাহ কমেছে। এ কারণে বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের দর স্বাভাবিক রাখতে দেশের বিভিন্ন এলাকার মোকামে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাবেচার সুযোগ বাড়াতে হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button