খুলনা বিভাগসারাদেশ

নড়াইলে ‘শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ বিষয়ক’ অভিভাবক সমাবেশ

নড়াইল: নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে বিষয়ে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে বিদ্যালয় মিলনায়তনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শংকর কুমার পাঠকের সভাপতিত্বে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিরুৎসাহিত করে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম ছায়েদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডল।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা তথ্য অফিসার ইব্রাহিম আল মামুন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা বিকাশ কুসুম চক্রবর্তী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাপস পাঠক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য আশীষ পাল, সমাজসেবক দিলীপ বিশ্বাস, বিপুল সেন, বিধান রায়সহ অনেকে।

বক্তারা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন আমাদের যেমন উপকার করে তেমনি ক্ষতিও ডেকে আনে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ঘোষণা অনুযায়ী জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে মোবাইল ফোন নিয়ে আসলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের আন্তরিক ও সচেতন হতে হবে। এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নেও সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়ালেখা করছে কিনা, স্কুলে আসছে কিনা এসব বিষয় অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, সম্প্রতি নড়াইলের দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনা নিষেধ থাকা সত্তে¡ও নড়াইলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গোপনে ফোন ব্যবহার করায় উদ্বেগ জানিয়ে বন্ধের নির্দেশনা জারি করা হয়। এ বিষয়ে গত ২৮ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান। এ নির্দেশনায় ঈদুল আযহার ছুটির পর নবম-দশম ও একদাশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ও শিক্ষার মানোন্নয়নে বিষয়ে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে চারটি নির্দেশনা দেয়া হয়। এগুলো হলো-১. মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসায় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন আনতে পারবে না। ২. মোবাইল না আনার নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের তৎপর থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ চেক করা যেতে পারে। ৩. কোনো শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে তা নিয়ে নেয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪. মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ঈদের (ঈদুল আযহা) ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করতে হবে।

শিক্ষা অফিস ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুন নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় ভারতের বিতর্কিত রাজনৈতিক নেত্রী নুপুর শর্মাকে সমর্থন করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসসহ অভিযুক্ত ছাত্রকে জুতার মালা পরানো হয়।

এছাড়া মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শিক্ষা অফিসসহ এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, গত ১৫ জুলাই নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে বিক্ষুদ্ধ লোকজন সাহাপাড়ার পাঁচটি বাড়ি ও দিঘলিয়া বাজারের ছয়টি দোকান ভাংচুর করেন। এর মধ্যে গোবিন্দা সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার ও সাউন্ডবক্স এবং আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাংচুর ও মহাশ্মশান কালিবাড়ি মন্দির সামান্য ক্ষতি করে বিক্ষুদ্ধরা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button