আন্তর্জাতিক

‘আমিরাতের জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে’

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন ও সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো যখন কাশ্মীরে গণহত্যার আশংকা করছেন, ঠিক সে সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন।

কাশ্মীর ইস্যুতে আরব দেশগুলোর এভাবে সরাসরি ভারতের পক্ষাবলম্বন নিয়ে মুসলিম বিশ্বে এক ধরনের আক্ষেপ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও চলছে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড়।

মোদিকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দেয়ার সমালোচনা ও নিন্দা করে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্সের নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ গিলানি বলেছেন, মোদিকে পদকটি দেয়া হয়েছে রাজতান্ত্রিক সরকারের পক্ষ থেকে। এতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নেই। তবে আমিরাতের এই পদক্ষেপে কাশ্মীরি জনগণ হতাশ।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পুরস্কৃত করায় সংসদীয় প্রতিনিধি দলের আরব আমিরাত সফর বাতিল করেছেন পাকিস্তানের সিনেট চেয়ারম্যান সাদিক সাঞ্জরানি।

আমিরাত সরকারের আমন্ত্রণে রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত তিন দিনে সফরে যাওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের। এ সময় উপসাগরীয় দেশটির সংসদীয় ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তাদের।

ভারতীয় দখলদারিত্বের মুখে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার অধিকারকে সমর্থন করায় আরব আমিরাত সফর বাতিল করা হয়েছে বলে দেশটির সিনেট সচিবালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

কাশ্মীরি মুসলমানদের ওপর চরম নির্যাতনের এ মুহূর্তে মোদিকে এ সম্মাননা দেয়ায় বিশ্ববিখ্যাত আলেম, পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টের শরীয়া বেঞ্চের সাবেক বিচারপতি মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি টুইটারে আক্ষেপ ও দু:খ প্রকাশ করেছেন।

রোববার আল্লামা তাকি উসমানি আরবি ভাষায় এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘হায় আফেসোস! লক্ষ লক্ষ মুসলমানের রক্তে লাল হল যার হাত, মুসলমানদের ভূখণ্ড ছিনিয়ে নিয়ে গোটা কাশ্মীরকে কারাগারে পরিণত করল যে ব্যক্তি, যার কারণে কাশ্মীরে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় গণহত্যা ঘটতে যাচ্ছে, সেই ব্যক্তিই কিনা এক আরব মুসলিম দেশ থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদা পেয়েছেন। সেদেশের জন্যে এর চেয়ে বড় লজ্জা ও লাঞ্ছনা আর কী হতে পারে!’

এর আগে ব্রিটিশ আইনপ্রনেতা নাজ শাহ এক খোলা চিঠিতে মোদিকে এই সম্মাননা না দিতে আমিরাত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বসবাসরত হাজারো কাশ্মীরি নয়, বরং আমি নিজেকে একজন কাশ্মীরি হিসেবে চিন্তা করে আপনাদের সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছি।’

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে রাজ্য বিলোপ ও অঞ্চলটিকে দ্বিখণ্ডিত করে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উপমহাদেশের ইতিহাসে এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী গুরুত্বও বিশাল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ কাশ্মীরসহ এই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। এবং দীর্ঘমেয়াদে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি মুসলিমপ্রধান এই এলাকাটির মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য বদলে দেবে।

কাশ্মীর নিয়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের এমন সুপরিকল্পিত কৌশলের বিষয়ে আরব দেশগুলোর নির্লজ্জ সমর্থন ও মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিমকে ক্ষুব্ধ করেছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button