রংপুর বিভাগসারাদেশ

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নৌরুট বাসের ভাড়া কমলেও নৌকার ভাড়ার কমেনি

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:করোনা দুর্যোগের পর সারা দেশে বাসের ভাড়া কমলেও কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নৌ রুটের ইঞ্জিন চালিত নৌকার (ট্রলার) যাত্রি পারাপারে ভাড়া কমানো হয়নি। করেনার সময়ে সরকারের নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে তিনগুন বেশি হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে নৌরুটে যাত্রি পারাপারের নৌকা গুলো। এখানে যেমন ঘাট ইজারাদার তাদের ইচ্ছা মতো টোল আদায় করছে তেমনি নৌকার মালিক গুলো তাদের মনমতো যাত্রিবাড়া আদায় করছে। সরকারি নিয়মনীতিকে ডাস্টবিনে ফেলে ব্রহ্মপুত্র নৌরুটে টোল ও যাত্রি ভাড়ার নামে দিনদুপুরে ডাকাতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুসারে রৌমারী ও রাজীবপুর থেকে চিলমারী নৌরুটের যাত্রি প্রতি ভাড়া ৩৫ টাকা। রৌমারী থেকে কুড়িগ্রামের মোগলবাসা এবং রাজীবপুর থেকে গাইবান্ধার বালাসি নৌরুটে যাত্রি প্রতি ভাড়া ৫০ টাকা করে আদায় করা যাবে। একই ভাবে পন্যবাহি ভাড়াও নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। রাজীবপুর থেকে চিলমারী ও গাইবান্ধা, রৌমারী থেকে চিলমারী, ফকিরের হাট ও মোঘলবাসা ঘাট হয়ে প্রতিদিন যাত্রিবাহি নৌকা যাতায়াত করে থাকে। এছাড়াও নয়াচর, করইবইশাল, কোদালকাটি, কর্তিমারী, সাহেবের আলগা, খেড়–য়া ও বড়চরে খেওয়ার নৌকা রয়েছে। সব মিলে প্রায় দুই হাজারের মতো নৌকা রয়েছে।
সরেজমিনে যাত্রি সাধারণদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, করোনার দুর্য়োগের সময়ে রৌমারী থেকে চিলমারী, ফকিরের হাট এবং রাজীবপুর থেকে চিলমারী নৌরুটের যাতায়াতকারি নৌকায় যাত্রি প্রতি ভাড়া ৩৫ টাকার স্থলে ১০০ টাকা হারে আদায় শুরু করে নৌকা মালিকরা। রাজীবপুর থেকে গাইবান্ধা এবং রৌমারী থেকে মোগলবাসা নৌরুটে যাত্রি প্রতি ভাড়া ৫০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা করে হারে নেয়া হয়েছে। একই ভাবে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরাঞ্চলে খেয়ার নৌকায় ৫ টাকার স্থলে ১৫ টাকা এবং ১০ টাকার স্থলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে যাত্রি প্রতি হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করাকে কেন্দ্র করে প্রায়ই যাত্রির সঙ্গে ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা ঘটছে। অপরদিকে পন্যসামগ্রী পরিবহনে নিদির্ষ্টহারে টোলের স্থলে অনেক বেশি ভাড়া ও ঘাটের টোল নিচ্ছে। নিয়ম অনুসারে যাত্রি প্রতি ভাড়া ও টোল আদায়ের তালিকা প্রতিটি নৌকা ঘাটে প্রকাশ্যে টাঙ্গিয়ে রাখার নির্দেশ থাকলেও তা দেখা যায়নি।
সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে সড়ক ও নৌ পথে আগের ভাড়া আদায় করার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুসারে সড়ক পথে যাত্রিবাহি বাসে আগের ভাড়ায় ফিরে গেলে ব্রহ্মপুত্র নৌপথে যাত্রি ভাড়া কমানো হয়নি। এ নিয়ে যাত্রি সাধারণের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রি ভাড়া নিয়ে প্রায়ই যাত্রিদের সঙ্গে নৌকা মালিকদের ঝগড়া বিবাদের ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে ‘যাত্রির অধিকার রক্ষা কমিটি’ নামের সংগঠনের সংগঠক মহির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, ‘নৌকা বা ট্রলার মালিকরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছা মতো ভাড়া আদায় করছে। নৌকা ব্যবসায়িদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে নৌকা চালানোর অনুমতি দিচ্ছে ইজারাদার। আমরা সরকারি নিয়ম অনুসারে যাত্রি ভাড়া আদায় করা হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ’
নৌকা মালিকরা অভিযোগ করেন, এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে যাত্রি পারাপারের জন্য তালিকাভুক্ত করতে আমাদেরকে নৌকা প্রতি এক লাখ টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে ইজারাদারকে। ওই টাকা না দিলে নৌকা চালানোর অনুমতি দেয় না ইজারাদার। তাছাড়া যাত্রি পারাপারে নিয়মিত টোল তো দিতেই হয়। নৌকার তেল খরচ ও মাঝিদের মজুরি খরচ তুলতে যাত্রিদের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজীবপুর, চিলমারী ও রৌমারী লট ঘাটের ইজারাদার ফিরোজ আহমেদ ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘এবার অনেক বেশি টাকায় ঘাট ইজারা নিয়েছি। এ কারনে ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে।’ সরকারি নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইজারার সিডিউলে উল্লেখ আছে বৈঠা বাওয়া নৌকার কথা। সেখানে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ব্যবহার করছি আমরা। সে হিসেবে বাড়া তো একটু বেশি হবেই।’

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীরুল ইসলাম জানান, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে-এমন কোনো অভিযোগ আমি পাইনি।’ তবে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ‘ইজারাদারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরকারি নিয়ম অনুসারে যাত্রিভাড়া ও টোল আদায় করার জন্য।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button