রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

ফেসবুকে পরিচয় থেকে বিয়ে, শ্বশুরবাড়িতে নিয়েই হত্যা

বগুড়ার কলেজছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর প্রথমবারের মতো বরিশালের গৌরনদীতে নিজেদের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে হত্যা করেন সেনাসদস্য স্বামী। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার ওই সেনাসদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ বরিশালের বাবুগঞ্জে একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে নিহত তরুণীর লাশের অংশবিশেষ, ব্যবহৃত ওড়না ও মুঠোফোন উদ্ধার করেছে। ঘটনাটি দুই এলাকাতেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

নিহত তরুণীর নাম নাজনীন আক্তার (২২)। তিনি বগুড়া সদরের সাব গ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল লতিফের মেয়ে। পড়াশোনা করতেন বগুড়া সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম সাকিব হোসেন (২৪)। তার গ্রামের বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর গ্রামে। বাবা ভ্যানচালক করিম হাওলাদার মা ও বোনকে নিয়ে গৌরনদী বাটাজোর হরহর গ্রামের সালাউদ্দিন মিয়ার বাড়িতে একটি টিনের ঘরে ভাড়া থাকেন। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত সেনাসদস্য হিসেবে বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন সাকিব।

নিহত নাজনীনের পরিবার ও পুলিশ জানায়, নাজনীনের সঙ্গে ফেসবুকে সাকিব হোসেনের পরিচয় হয়। পরে সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক এবং পরে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর তারা শরিয়ত মোতাবেক এবং ১ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন। দুজনই বিয়ের কথা গোপন রাখেন। পরে দুই পরিবারে জানাজানি হলে মেয়ের পরিবার প্রথমে বিয়ে মেনে না নিলেও পরবর্তী সময়ে মেনে নেয়। তবে বিয়ের কাবিননামায় সাকিব প্রকৃত পরিচয় গোপন রেখে নিজের বাড়ি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ‘জালোকাঠি’ গ্রাম, পোস্ট আগৈলঝাড়া উল্লেখ করেন।

বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ৩ মে সাকিব কর্মস্থল বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে এক মাসের ছুটি নেন এবং বগুড়ায় শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করেন। ২৪ মে সকালে সাকিব স্ত্রীকে বলেন, তার বাবা গুরুতর অসুস্থ। মা–বাবা তাকে দেখতে চান। এ কথা বলে শ্বশুরবাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে স্ত্রী নাজনীনকে নিয়ে তিনি বরিশালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। ওই দিন বিকেলে নাজনীনের পরিবারের লোকজন বাড়ি ফিরে মেয়ে-জামাতাকে না পেয়ে মুঠোফোনে ফোন করলে সাকিব একেক সময় একেক কথা জানান। রাত ১১টার দিকে নাজনীনের পরিবার ফোন দিলে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ২৬ মে সকালে নাজনীনের বড় ভাই আবুল আহাদ বগুড়া সদর থানায় বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন। পুলিশ বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টকে জানায় এবং ২৭ মে নাজনীনের বড় ভাই আহাদ নিজেও বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ সেনাসদস্য সাকিবের ছুটি বাতিল করে ২৮ মে কর্মস্থলে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দিন হাজির হলে সাকিবকে সেনা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে তিনি স্ত্রী নাজনীনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে ক্যান্টনমেন্ট কর্তৃপক্ষ সাকিবকে বগুড়া থানায় সোপর্দ করে। পরে পুলিশের কাছে সাকিব খুনের দায় স্বীকার করে বলেন, ২৪ মে রাত ১০টার দিকে স্ত্রী নাজনীনকে নিয়ে তিনি বাবার ভাড়া বাসায় পৌঁছান। সেখানে টিনের জীর্ণশীর্ণ ঘরে উঠলে স্ত্রী তার কাছে জানতে চান, প্রেমের সময় তিনি বাবার বাড়ি পাঁচতলা বিল্ডিং বলেছিলেন। তবে এখন কেন এখানে উঠলেন? এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি ও ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে সাকিব নাজনিনকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ মে রাত ১২টায় তিনি নাজনীনকে প্রথমে গলায় রশি পেঁচিয়ে, পরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। পরে নাজনীনের লাশ গলার ওড়না দিয়ে টেনে নিয়ে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনসহ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
নিহত নাজনীনের বড় ভাই আবুল আহাদ (৩০) বলেন, সাকিব বিয়ের কাবিননামায় মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তার বাবা এলাকার একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং গ্রামে তাদের পাঁচতলা বাড়ি আছে বলে তার ছোট বোন নাজনীনকে জানিয়েছিলেন।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. তৌহীদুজ্জামান বলেন, বগুড়া সদর থানার পুলিশ মডেল থানা-পুলিশের সহায়তায় আজ অভিযুক্ত সাকিব হাসানকে নিয়ে লাশ উদ্ধারে বের হয়ে পাম্প দিয়ে ট্যাংকের পানি সেচ করে দুপুরে লাশের আংশিক, ব্যবহৃত একটি ওড়না, মুঠোফোন উদ্ধার করেছেন তারা। লাশের বাকি অংশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার পর থেকে সাকিবের মা–বাবা ও বোন পলাতক রয়েছেন। সাকিবের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে খুনের পুরো ঘটনা জানা যাবে বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ২৯ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নাজনীনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশেই ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নেটিজেনরা ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button