জাতীয়রাজনীতিলিড নিউজ

পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন নির্বাচন দিন : ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, এই পার্লামেন্ট ভেঙে দিন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গঠন করুন। জনগণ এখন সব অধিকার থেকে বঞ্চিত। নতুন সরকার এসে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। রোববার বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন সড়কে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় হবে না বলেই বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্র ও মানুষের মুক্তির জন্য খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তিনি দেশের মানুষকেও শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘ক্যাসিনোর টাকার ভাগ তারেক রহমানের কাছে যায়’- তথ্যমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন দাবিকে হাস্যকর বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আমাদের তথ্যমন্ত্রী খুব ক্রিয়েটিভ। এ ধরনের অলৌকিক তথ্য জাতির সামনে প্রকাশ করা তার অভিনব একটি আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা যেতে পারে।

তবে তিনি যে ধরনের কাল্পনিক তথ্যই উপস্থাপন করুন না কেন, দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। জনগণ ভালোভাবেই জানেন প্রকৃত ঘটনা কী। মির্জা ফখরুল ক্যাসিনো নিয়ে আরও বলেন, যারা চুনোপুঁটি তাদেরই শুধু এক্ষেত্রে ধরা হয়েছে। কিন্তু যারা মূলহোতা তারা এখনও অন্তরালে রয়ে গেছেন। তিনি ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের রাঘববোয়ালদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ধারাবাহিক জুলুম, নির্যাতন ও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশব্যাপী বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক লাখ মিথ্যা ও সাজানো মামলা করা হয়েছে।

এসব মামলায় বিএনপির ২৬ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। মামলা ও নির্যাতনে বিএনপির আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে একদিন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, রাজশাহীর বিভাগীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক ও গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়েছে।

সমাবেশে যাতে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণ অংশ নিতে না পারেন সেজন্য পথে পথে বাধা সৃষ্টি করেছে পুলিশ। বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের যানবাহন। এমনকি রাজশাহীমুখী ট্রেনগুলোও আশপাশের স্টেশনে আটকে রাখা হয়। এই সমাবেশ বানচাল করতে প্রশাসন এক ধরনের অঘোষিত কারফিউ জারি করে। এরপরও বিএনপি নেতাকর্মী ও জনগণ মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন এবং সমাবেশকে সফল করেছেন।

এজন্য তিনি রাজশাহী বিভাগের বিএনপি নেতাকর্মী ও রাজশাহীর মানুষকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন, কিন্তু বাইরের পুরস্কার নিয়ে লাভ হবে না। এসব পুরস্কারের বদলে দেশের মানুষের ভালোবাসা অর্জন করুন। জনগণকে নির্যাতন করে আপনি তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন।

সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার পূজা উপলক্ষে ভারতকে ৫০০ টন ইলিশ উপহার দিয়েছে। অথচ সীমান্তে প্রতিদিন বাংলাদেশিদের নির্দয়ভাবে হত্যা করছে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। এ ভারতের তোষামোদি করেই এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

কিন্তু এভাবে ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না। তিনি বলেন, এ সরকারকে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে কিন্তু সরকারই এক সময় পুলিশের পাশে থাকবে না। পুলিশের ওপর ভর করে ক্ষমতাতেও বেশিদিন থাকা যাবে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ দু’বার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। একবার পঁচাত্তরে বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্র হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ, আরেকবার ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের বরখাস্ত হওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাঁদাবাজি করেছেন, ঈদ সেলামির নামে তারা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে ৮৬ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা দেশের অর্থ সমানে লুটপাট করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের সতেরো কোটি মানুষই খালেদা জিয়ার মুক্তি চান। শুধু শেখ হাসিনা চান না। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে একমাত্র বাধা শেখ হাসিনা। জনগণ খালেদা জিয়াকে ভালোবাসেন। একদিন তারাই তাকে মুক্ত করবেন।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের পরিচালনায় মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ, হাবিবুর রহমান হাবিব, কামরুল মুনীর, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাদিম মোস্তফা, জিএম সিরাজ এমপি, রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

এদিকে বিএনপির এ মহাসমাবেশ উপলক্ষে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীমুখী যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়। অঘোষিতভাবে পরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল দিনভর। ট্রেন চলাচলও বন্ধ ছিল দিনের বেশিরভাগ সময়।

সমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান- রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ী, মোহনপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। তবে সন্ধ্যার পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সকাল থেকে হঠাৎ রাজশাহী মহানগর থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে দূরপাল্লার রুটগুলোতে বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক নেতারা বলছেন, সমাবেশের কারণে হামলা ও ভাংচুর আতঙ্কে কিছু গাড়ি বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা যেন মহাসমাবেশে যোগ দিতে না পারেন সেজন্য অঘোষিতভাবে এ পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সকাল থেকে হঠাৎ অঘোষিতভাবে আন্তঃজেলা রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

নাটোর : সকাল থেকে নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের বনবেলঘড়িয়া পশ্চিম বাইপাস ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে যাত্রীবাহী বিভিন্ন গাড়িতে পৃথকভাবে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দাবি, বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা না করতে পারে সেজন্যই তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন।

নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, কোনো দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ মহাসড়কে অবস্থান নেয়নি। পুলিশ জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন সময় চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালায়, এটা তারই অংশ। অন্যদিকে তল্লাশির নামে পথে পথে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বগুড়া : বগুড়া-রাজশাহী রুটেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বিএনপির নেতাকর্মীরা মাইক্রোবাস, অটোরিকশা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পথে পথে ট্রাফিক পুলিশ বাধা ও গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে বহু কষ্টে সিএনজি অটোরিকশা ও ভ্যানে গ্রামের রাস্তা দিয়ে রাজশাহী পৌঁছেছেন।

আগাম ঘোষণা ছাড়া ওই রুটে গাড়ি বন্ধ করে দেয়ায় সপ্তাহের প্রথম দিন অফিসগামী জনগণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সরকার বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে সমাবেশে উপস্থিতি কমাতে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল লতিফ মণ্ডল জানান, গাড়ি কেন বন্ধ সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

সিংড়া (নাটোর) : সকাল থেকে সিংড়ার বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের নিচে চেকপোস্ট বসিয়ে বাস ও প্রাইভেট গাড়িতে তল্লাশি চালায় সিংড়া থানা ও ট্রাফিক পুলিশ। এতে সাধারণ জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সরেজমিন সকাল ১০টায় সিংড়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীগ্রামী নান্নু এন্টারপ্রাইজ বাস যাত্রীদের ভাড়া ফেরত দিয়ে গাড়ি থেকে থামিয়ে দিচ্ছে। জানতে চাইলে বাসের সুপারভাইজার বলেন, পুলিশ গাড়ি যেতে দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে সিংড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গাড়িতে তল্লাশি করা হয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button