রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

বগুড়া বিমানবন্দর দুই দশক পরে বিমান ওড়ানোর উদ্যোগ

অবকাঠামো নির্মাণের প্রায় দুই দশক পর বগুড়া বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চার সদস্যের একটি কমিটি করেছে। কমিটির সদস্যরা আগামী রবিবার বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দেবেন।

বেবিচক পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্মসচিব মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু • ফ্লাইট চালুর করতে চার সদস্যের যে কমিটি হয়েছে, তাতে আমেয়ক করা হয়েছে উপপরিচালক (সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) ইশরাত পান্নাকে।

বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অনুপ কুমার তালুকদার স্বাক্ষরিত আরেক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে বগুড়া বিমানবন্দর চালুকরণের বিষয়ে বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলুর প্রস্তাবনার আলোকে সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদনসহ আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। গত ১ মার্চ রেজাউল করিম বাবলু বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে এরপর

বিমান চলাচলের জন্য ‘৯০-এর দশকে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় প্রায় ১১০ একর জায়গাজুড়ে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়। আন্তর্জাতিকমানের এই বিমানবন্দর নির্মাণে খরচ হয় ২২ কোটি টাকা। কিন্তু ২৪ বছরেও বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিমানবন্দরের কাজ সম্পন্ন করলেও ২০০১ সালে বিএনপি- জামায়াত জোট সরকার এটি বাণিজ্যিকভাবে চালু না করে বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আয় এবং দেশি-বিদেশি যাত্রীদের সুবিধার্থে বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দরটি চালু করার সুপারিশ করেন সংসদ সদস্য।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পুলিশের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় যান। বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়সহ দর্শনীয় ও ধর্মীয় একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। ওই জেলায় সরকারি- বেসরকারি মিলিয়ে ছোট-বড় প্রায় ২০টি শিল্পকারখানা রয়েছে। এসব শিল্পকারখানার মধ্যে এসেনশিয়াল ড্রাগস, ওয়ান ফার্মাসিউটিক্যালস, ট্রান্সকা কনজ্যুমার প্রোডাক্ট, উত্তরা মোটরস, এবিসি টাইলস অন্যতম। বগুড়ায় চারতারকা মানের  একটি ও পাচ তারকা মানের একটি হোটেল রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে বিমানসেবা চালুর মতো সব ধরনের অনুকূল পরিবেশ বগুড়ায় রয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। পর ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ জন্য ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১০৯ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০০০ সালে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে বিমান আর ওড়েনি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button