স্বাস্থ্য

গাট মাইক্রোব : বৃদ্ধ হলেও সুস্থ থাকুন!

বয়সের সাথে সাথে আমাদের মাংসপেশীর ভর এবং কার্যক্রম বদলে যায়। একটু একটু করে ভঙ্গুর হয়ে পড়ি আমরা শারীরিকভাবে। কিন্তু কেন? সম্প্রতি আমাদের গাট মাইক্রোবকে এর পেছনে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইদুরের উপরে চালানো তাদের এই পরীক্ষায় পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, আমাদের অন্ত্রের নানারকম মাইক্রোবের কারণে এমনটা হয়ে থাকে।

সিঙ্গাপুরের নায়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা মাংসপেশী নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। আমাদের মাংসপেশী কীভাবে বৃদ্ধি পায়, কীভাবে পরিচালিত হয় সেটা দেখার সময়ই বয়সের সাথে সাথে মাংসপেশীতে চলে আসা পরিবর্তনের কারণ হিসেবেও অন্ত্রের নানারকম মাইক্রোবকে খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।

এক্ষেত্রে দুই রকমের ইদুরের ওপরে গবেষণা চালিয়েছেন তাঁরা। প্রথম রকমের ইদুরদের অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর মাইক্রোব ছিল এবং পরের রকমের ইদুরের অন্ত্রে মাইক্রোব ছিলো না। এক্ষেত্রে, গাট মাইক্রোব নেই এমন ইদুরদের মাংসপেশীতে অতিরিক্ত দূর্বলতা খুঁজে পান তাঁরা। এই মাংসপেশী থেকে শক্তিও খুব কম উৎপন্ন হয়।

এসময় গাট মাইক্রোব নেই এমন ইদুরের শরীরে গাট মাইক্রোব প্রতিস্থাপনও করেন বিজ্ঞানীরা। এতে করে অন্য ইঁদুরদের শরীরের মাংসপেশী আরও স্বাস্থ্যবান হতে শুরু করে বলে জানান তাঁরা।

গত কয়েক বছর ধরে গাট মাইক্রোবের উপরে গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর ফলাফল হিসেবে তাঁরা দেখেছেন যে, এই গাট মাইক্রোবগুলো আমাদের শরীরের কোষের সাথে সংযুক্ত হয়ে কাজ করা শুরু করে। আমাদের হজমক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ইত্যাদি এমন অনেক ব্যাপারেই এই মাইক্রোবগুলো কাজ করে।

বেশ কিছু পরীক্ষায় দেখা যায় যে, স্থুলতা, ডায়াবেটিস এবং ফুসফুসের কোনো সমস্যার কারণে আমাদের অন্ত্রের পরিবর্তন তৈরি হয়। ক্যানসার এবং মস্তিষ্কের স্নায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সব নিউরোলজিকাল সমস্যাও তৈরি করতে পারে এই পরিবর্তন।

তাই শারীরিক এমন অনেক সমস্যা দূর করার জন্য গবেষকেরা ধীরে ধীরে গাট মাইক্রোবের উপরে নির্ভরশীল হতে চাচ্ছেন। গবেষকদের মতে, সম্প্রতি পাওয়া বেশ কিছু গবেষণার ফলাফল দেখে মনে করা হচ্ছে গাট মাইক্রোব মানুষের শারীরিক নানারকম সমস্যা দূর করার জন্য বেশ ভালো কাজ করতে সক্ষম।

এছাড়া বয়সের সাথে সাথে শরীরের মাংসপেশীর ভর করে যাওায় মানুষ অনেক বেশি দূর্বল হয়ে পড়ে। গাট মাইক্রোবের মাধ্যমে সেই ভর ফিরিয়ে আনা গেলে অনেক বেশি সুস্থ থাকতে পারবেন বয়স্করাও।

মূলত, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাংসপেশীর মধ্যকার ভর কমে গেলে শারীরিক কোন সমস্যার বিরুদ্ধে কাজ করা শরীরের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। এছাড়া, শরীরের একটি কোষ ও একটি স্নায়ু অন্য কোষ ও অন্য স্নায়ুর সাথে যোগাযোগ করতে পারে না আর আগের মতো এসময়।

ফলে মানুষ পক্ষাঘাতের শিকার হয়। এক্ষেত্রে, মাইক্রোব যেহেতু শরীরের বিভিন্ন অংশের মধ্যকার যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, তাই কোনভাবে যদি মানুষের শরীরে এই জিনিসটি স্থাপন করা যায়, সেক্ষেত্রে বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তৈরি হওয়া এমন সমস্যাগুলো থেকেও দূরে থাকা সম্ভব হবে। গাট মাইক্রোবের মাধ্যমে শরীরের মাংসপেশী বেশি করে শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম হলে সেটিও আমাদের শরীরকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে সক্ষম হবে।

কিন্তু আসলেই কি এমন কিছু বাস্তবে করা সম্ভব হবে? বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করে চলেছেন। এখনো পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুসারে, খুব দ্রুতই আমরা এমন কোন চমৎকার চিকিৎসা পদ্ধতির মুখোমুখি হতে পারি। তবে তার জন্য আরেকটু অপেক্ষার দরকার হবে।

কে জানে, হয়তো তখন বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে আমরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই সেগুলো আর দেখাই দেবে না। সুস্থ অবস্থাতেই আরও অনেকগুলো দিন বৃদ্ধ হয়ে জীবন কাটাতে পারবেন আপনি!

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button