আন্তর্জাতিক

পঞ্জশির দখলে মরিয়া তালেবান, প্রতিরোধের ডাক মাসুদ বাহিনীর

স্থানীয় মিলিশিয়াদের দখলে চলে যাওয়া ৩ জেলায় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি করে তালেবান বলছে, এবার তাদের লক্ষ্য পঞ্জশির। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে এরই মধ্যে জানা গেছে, দখলের বাইরে থাকা এই একমাত্র অঞ্চলটিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে শত শত যোদ্ধা পাঠিয়েছে তালেবান। তবে দ্য ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) পক্ষ থেকে তালেবানকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কাবুল বিমানবন্দরে সোমবার গুলিতে একজনের প্রাণহানির কথা জানা গেছে। তালেবান বলছে, তাদের কাছে সব আফগান সুরক্ষিত। বিদেশি সেনাদের তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে তারা পরে সিদ্ধান্ত নেবেন। এখন তাদের নজর ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটিতেই।
গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর স্থানীয় মিলিশিয়া গ্রুপগুলো প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ হিসেবে বাঘলান প্রদেশের তিনটি জেলা বানো, দেহ সালেহ এবং পুল-ই-হিসার দখলে নেয়। তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক টুইট বার্তায় বলেছেন, সোমবার তালেবানের যোদ্ধারা ওই তিন জেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং পঞ্জশির উপত্যকার কাছের বাদাখশান, তাখার এবং আন্দারাবের কাছে অবস্থান নিয়েছে।
আফগান সাবেক সরকারি বাহিনীর সদস্যরা সুরক্ষিত পঞ্জশির উপত্যকায় একটি প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলছেন। এর মাধ্যমে সশস্ত্র তালেবানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনে তালেবানের সঙ্গে আলোচনাও করতে চায় তারা। দ্য ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ) নামের এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য আফগানিস্তানে রক্তপাত এড়ানো এবং নতুন ধরনের সরকার ব্যবস্থার জন্য চাপপ্রয়োগ করা।
দেশটির কিংবদন্তি মুজাহিদীন কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদ তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রায় ৯ হাজার সদস্যের এই প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার দুদিন আগে জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন মুজাহিদীন কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদ।
রাজধানী কাবুল থেকে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের পঞ্জশির উপত্যকায় ২০০১ সালের আগেও তালেবানকে প্রতিরোধ করেছিল আহমদ মাসুদের বাহিনী। এর আগে রোববার ভোরের দিকে তালেবানের আলেমারাহ তথ্য সেবা কেন্দ্র বলেছে, পঞ্জশিরের দিকে শত শত তালেবান যোদ্ধা যাচ্ছেন। তবে ওই এলাকায় কোনো সংঘাত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরের দিকে যাওয়া প্রধান মহাসড়কের সালং পাস খোলা ছিল এবং শত্রু বাহিনীকে পঞ্জশির উপত্যকায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। তবে তার বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, এই মুহূর্তে সেখানে কোনো লড়াই হচ্ছে না। ইসলামিক আমিরাত শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এনআরএফের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান আলি নাজারিও বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় আসতে চায়। তবে তা ব্যর্থ হলে অন্য কোনো পরামর্শ গ্রহণ করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
নাজারি বিবিসিকে জানান, পঞ্জশিতে এখন সারা দেশ থেকে বিদ্রোহীরা জড়ো হচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ এখন তালেবানকে ঠেকাতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো যুদ্ধ ও সংঘাত এড়াতে আগে আলোচনায় বসতে চাই।’
কাবুল বিমানবন্দরে গোলাগুলিতে নিহত ১
কাবুল বিমানবন্দরের নর্থ গেইটে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের সঙ্গে পশ্চিমা নিরাপত্তা বাহিনী ও আফগান রক্ষীদের গোলাগুলি হয়েছে বলে জার্মানির সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে। সোমবারের এ ঘটনায় একজন আফগান রক্ষী নিহত ও আরও তিনজন আহত হয়েছেন বলে টুইটারে জানিয়েছে তারা। এ লড়াইয়ে মার্কিন ও জার্মান বাহিনীগুলোও জড়িয়ে পড়েছে।
‘নির্ধারিত সময়েই আফগানিস্তান ছাড়তে হবে’
বিদেশি সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া না হলে এর জবাব দেওয়া হবে বলে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন হুমকি দিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার সময় আগামী ৩১ আগস্টের পর আর বৃদ্ধি করবে না তালেবান। তাদের দাবি, সব আফগানই তালেবানের অধীনে নিরাপদ।
প্রত্যাহারেই নজর যুক্তরাষ্ট্রের
দুই দিনের সফরে সিঙ্গাপুরে গেছেন কমলা হ্যারিস। এই সফরে তিনি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব ও প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে লির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কমলা বলেন, আফগানিস্তানে কী ঘটেছে, এটা বিচার-বিশ্লেষণ করতে বেশ সময় লাগবে।
কমলা বলেন, ‘ঠিক এই মুহূর্তে আমরা মার্কিন নাগরিক, তাদের সহায়তাকারী আফগান এবং নারী, শিশুসহ ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছি।’ তার মতে, দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এখনও অনেক সময় রয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button