রাজশাহীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য
রাজশাহী প্রতিনিধি: সকল জল্পনা-কল্পনা ও অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সারা দেশের ন্যায় রাজশাহীতেও খুলে দেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে অবসান ঘটেছে ঘরবন্দী শিক্ষাজীবনের। প্রায় দেড় বছর পর রোববার খুলে দেয়া হয়েছে রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ। আনন্দঘন পরিবেশ ও চিরচেনা রুপে ফিরেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সরাসরি শ্রেণিকক্ষে বসতে পেরেছে শিক্ষার্থীরা। মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে তাদের প্রিয় শিক্ষকদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
রোববার দিনের শুরুতেই রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকাতেই দেখা গেছে পথে পথে ছেলেমেয়েরা হেঁটে যাচ্ছে। কেউ অভিভাবকের সাথে, কেউ সহপাঠীদের সাথে দল বেঁধে। আবার কেউবা একাকী। তাদের পরণে ছিল স্কুল পোশাক। আর পিঠে ছিল ব্যাগ। সকাল থেকেই রাজশাহীর স্কুল-কলেজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে সশরীরে একাডেমিক কার্যক্রম।
রাজশাহী শিক্ষা অফিস সূত্র বলছে, রাজশাহীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৫৮টি। এই সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ২ লাখ ৫৮ হাজার ৯০৬ জন। এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৪৭ টি। এখানে শিক্ষার্থী প্রায় ২ লাখ। সব মিলে প্রায় ৪ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে যাচ্ছে। রাজশাহী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক আছে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতিও ভালো। অনেক শিক্ষার্থীর সাথে অভিভাবকও এসেছেন। তারা দেখছেন তাদের ছেলেমেয়েরা কেমন পরিবেশে শ্রেণিকক্ষে বসছে। সার্বিক পরিবেশে অভিভাবকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে রাজশাহীর বেশ কয়েকটি স্কুলে আসা কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সারাক্ষণই বাসায় থাকছে তাদের সন্তানরা। আসক্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল ও ইন্টারনেটের প্রতি। মনোযোগ হারাচ্ছে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও। সারাক্ষণই ওদের মাথায় থাকে কখন মোবাইল নিয়ে গেম খেলতে বসবে। পড়াশোনার কথা বললে কান দেয় না। বাবা-মারা বলছেন, শিশুরা বাসায় থাকলেও নিয়মতান্ত্রিক জীবনে আর অভ্যস্ত নয় তারা। আবার অনেকে বলছেন, আমাদের মত জনবহুল দেশে টিকা নিশ্চিত ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলো এতে মহামারি আরও প্রকট হতে পারে। কারণ আমাদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তাই স্কুলের সকল স্টাফের টিকা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন না করা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তে ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে তারা স্কুল খোলার ব্যাপারে একমত।
কয়েকজন স্কুল প্রধান বলেন, তারা সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করাচ্ছেন। তারা হ্যান্ডসেনিটাইজারসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় করেছেন। শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানির ট্যাপ স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র কেনা হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও বলছে, তারা সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ক্লাস করছে। প্রায় দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পেরে তারা আনন্দ, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীর শিক্ষাসামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর ইউনিফর্ম বানানোর জন্য শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহীর টেইলার্সের দোকানগুলোতে কর্মব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যেন তারা দম ফেলারই সুযোগ পাচ্ছেন না। টেইলার্সের পাশাপাশি ভিড় বেড়েছে স্কুলের পোশাক বিক্রি করে এমনসব দোকানগুলোতেও। সেই সঙ্গে ভিড় বেড়েছে জুতার দোকানগুলোতেও। ভিড় দেখে অনেককেই বলতে শোনা গেছে যেন ঈদের বাজার।