খেলা

শেষ বলে জিতে সিরিজ বাংলাদেশের

রানের পাহাড় গড়েও শেষ বলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার রানের নাটকীয় জয় বাংলাদেশের। জয়ের জন্য ৩২৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ৩১৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। এ জয়ের ফলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। আগামী ৬ মার্চ সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে মুখোমুখি হবে দুই দল।

টাইগারদের দেয়া ৩২৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৬৭ রানে তিন উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। শুরুর ব্যর্থতার মাঝেও ফিফটি তুলে নেয় ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউই। তিনি ব্যাক্তিগত ৫১ রান করে তাইজুলের বলে বোল্ড হন। চার উইকেটে জিম্বাবুয়ের দলীয় রান তখন ১০২।

কিন্তু এরপর ওয়েসলি মাধেভেরে আর সিকান্দার রাজা জিম্বাবুয়ের হাল ধরেন। অবশেষে তাদের এই শক্ত জুটিতে আঘাত হানেন স্পিনার তাইজুল। দলীয় ১৮৩ রানের মাথায় ব্যক্তগত ৫২ রান করে মাধাভেরে বিদায় নেন। সতীর্থকে হারিয়ে সিকান্দার রাজাও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। অবশেষে অধিনায়ক মাশরাফির বলে দলীয় ২২৫ রানে বিদায় নেন তিনি। ৫৭ বলে ৬৬ রানের ঝড়ো ইনিং উপহার দেন তিনি।

শেষ মহুর্তে জিম্বাবুয়ের হয়ে ঝড়ো তোলেন  টিনোটেন্ডা মাটুমবোদজি ও ডনাল্ড টিরিপানো। জয়ের খুব কাছে গিয়ে বিদায় নেন মাটুমবোদজি। মাত্র ২১ বলে ৩৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু ততক্ষনে ডনাল্ড টিরিপানো আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। শেষ তিন বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন হয় ১২ রান। আল আমিনের তৃতীয় বলে বিশাল ছক্কা। পঞ্চম বলে কোন রান নিতে পারেনি ডনাল্ড। শেষ বলে মাত্র এক রান দেন আল আমিন।

মাত্র ২৮ বলে দুই বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় ৫৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ডোনাল্ড। বল হাতে তাইজুল তিনটি এছাড়া মাশরাফি,শফিউল, আল আমিন ও মিরাজ নেন একটি করে উইকেট।

এর আগে সিলেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবালের রেকর্ড গড়া ইনিংসের উপর ভর করে জিম্বাবুয়েকে ৩২৩ রানে লক্ষ্য দিয়েছে টাইগররা। মঙ্গলবার সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩২২ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল একাই  খেলেছেন ১৫৮ রানের ইনিংস।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে নেমে ১০৬ বলে ১২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম। এরপরও অবশ্য থামেননি তিনি। ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের গড়া রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের মালিক আগে থেকেই ছিলেন তামিম। এবার সেই রেকর্ডও তিনি নিজেই ভেঙেছেন।

এর আগে ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ১৫৪ রান করেছিলেন তিনি। ১০ বছরের বেশি সময় অক্ষত ছিল এই রেকর্ড। তবে রেকর্ড স্পর্শ করে ৪ রান যোগ হতেই বিদায় নিয়েছেন তামিম। ১৩৬ বলে তার ১৫৮ রানের ইনিংসটি ২০টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজানো।

বিদায় নেওয়ার আগে একটি অসাধারণ রেকর্ড গড়েছেন তামিম। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের মালিক এতদিন ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (১৫৪৯)। তাকে পেছনে ফেলে এখন শীর্ষে তামিম (১৫৫৬)। ১৪০৪ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন সাকিব আল হাসান।

রানে ফেরার দিনে আরও একটি অনন্য কীর্তি গড়েছেন তামিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক গড়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৬৯১৬ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন তামিম। এরপর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ৫০ ওভারের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ৪৮তম ফিফটি।

ফিফটিকে ১২তম সেঞ্চুরির দিকে নিয়ে যাওয়ার পথে ৭ হাজার রানের মাইলফলকের চূড়ায় ওঠেন ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তাকে ৭ হাজারি ক্লাবে নাম লেখাতে খেলতে হয়েছে ২০৬ ম্যাচ ও ২০৪ ইনিংস। তার গড় ৩৫.৮৭। সর্বোচ্চ স্কোর ১৫৪। তামিমের পরে আছেন দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞায় (এক বছর স্থগিত) থাকা সাকিব আল হাসান।

বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার ২০৬ ম্যাচ ও ১৯৪ ইনিংসে ৩৭.৮৬ গড়ে করেছেন ৬৩২৩ রান। সাকিবের ৯ সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে ৪৭ ফিফটি। এর আগে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৩ হাজার রানের চূড়া স্পর্শ করেন তামিম। অবশ্য এই কীর্তি তিনি আগেই গড়েছিলেন। তবে তার আগের ১৩০১৪ রানের মধ্যে আইসিসি বিশ্ব একাদশের হয়ে ছিল ৫৭ রান।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরু এনে দেওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তামিম ও লিটন দাস।  ১৪ বলে ৯ রান করে বিদায় নেন তামিম। লিটনের পর দুর্ভাগ্যের শিকার হন নাজমুল হোসেন শান্তও। ২৬তম ওভারে ওয়েসলি মাধেভেরের চতুর্থ বলে তুলে মারতে গিয়ে টিনোটেন্ডা মুতোমবোজির ক্যাচে পরিণত হন। ৫০ বলে ৬টি চারে ৫৫ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

মুশির বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ১০৬ রানের জুটি গড়েন তামিম। মাহমুদউল্লাহও দারুণ ব্যাট করছিলেন। কিন্তু তুলে মারতে গিয়ে জিম্বাবুয়ের হয়ে যুব বিশ্বকাপ খেলা মাধেভেরের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হন ৫৭ বলে ৪১ রান করা এই ব্যাটসম্যান। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ৩৪ রান যোগ করে বিদায় নেন তামিম।

দলকে ৩০০ রান থেকে ৮ রান দূরত্বে রেখে তামিম বিদায় নেওয়ার পর মুম্বার বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন মেহেদি হাসান মিরাজ (৫)। টিকতে পারেননি মাশরাফিও (১)। ইনিংসের ৪৯তম ওভারে জিম্বাবুয়ের পেসার তিরিপানোর বলে সিকান্দার রাজার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক। তিরিপানোর করা ওই ওভারেই কোনো রান না করেই বিদায় নেন তাইজুল।  শেষ ওভারে মিঠুন আর শফিউল মিলে যোগ করেন ৯ রান। মিঠুন অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ৩২ রান নিয়ে। বল হাতে জিম্বাবুয়ের মুম্বা ও তিরিপানো ২টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মাধেভেরে ও তাশুমা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button