জাতীয়

বঙ্গোপসাগর উত্তাল: ৪৯ ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ১০২

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের মধ্যে বরগুনাসহ উপকূলীয় এলাকায় ৪৯টি মাছধরা ট্রলার ডুবে গেছে। এতে নিখোঁজ হন ১০২ জন। জীবিত উদ্ধার করা হয় ৯৭ জনকে। এ ছাড়া অন্তত ১০৮ জেলেসহ ১৩টি ট্রলারের কোনো সন্ধান নেই।

গত শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার আজগরকাঠি এলাকার ছয়টি ট্রলার নিখোঁজ হয়। এগুলো হলো এফবি সৈকত, এফবি কেয়া, এফবি জুনাইদ, এফবি তাসলিম, এফবি জোসনা ও সোনারতরী। এসব ট্রলারে ১০২ জন জেলে ছিলেন। তাঁরা সবাই নিখোঁজ।

নিখোঁজ হওয়া ট্রলারের মালিক ও জেলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে খাদ্যসামগ্রী, প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যায় ট্রলারগুলো। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সাগর উত্তাল হতে থাকে। নিরাপদে ফিরে আসা এক জেলে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সাগর উত্তাল হতে থাকে। সাগরের অবস্থা খারাপ দেখে আমরা দ্রুত চালিয়ে উপকূলে ফিরে আসি। আসার সময় সাগরে অসংখ্য ট্রলার দেখে এসেছি আমরা। এসব ট্রলারের ভাগ্যে কী হয়েছে, তা জানা নেই। ’

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম মিয়া জানান, কয়েক দিন আগে একটি নিম্নচাপ শেষ হয়েছে। আবারও নিম্নচাপ শুরু হলে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত শুধু পাথরঘাটা উপজেলার ৩০টি মাছধরা ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে।

শুক্রবার বঙ্গোপসাগরে ভোলার ছয় ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ৪৯ জেলে উদ্ধার হলেও অন্য জেলেরা নিখোঁজ রয়েছেন। এ ছাড়া শুক্রবার থেকে ৫৭ জেলেসহ আরো তিনটি ট্রলারের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ডুবে যাওয়া ট্রলারের মধ্যে দুটি চরফ্যাশন উপজেলার। বাকি চারটি লালমোহন উপজেলার।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার ৫১ মাঝিমাল্লাসহ চারটি ট্রলারের খোঁজ মিলছে না। জানা গেছে, উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের কাজিকান্দা গ্রামের বশির ফরাজি, জয়নাল ব্যাপারী, নিজকাটা গ্রামের মিলন মিয়া ও জহির হাওলাদারের মালিকানাধীন চারটি ট্রলার ৫১ মাঝিমাল্লাসহ নিখোঁজ আছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমোন্তাজ গ্রামের আজহার, হালিম খান, মধ্য চরমোন্তাজের খলিল মুন্সি, রহম আলী মৃধা, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের গাইয়াপাড়া গ্রামের আলাউদ্দিন গাজী এবং চরগঙ্গা গ্রামের আজহার দস্তুরের ছয়টি ট্রলার নিখোঁজ হয়।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের পশ্চিম সুন্দরবনে পাঁচটি মাছধরা ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার দিনভর ঝোড়ো হাওয়ার কবলে বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন বাহির মান্দারবাড়িয়া এলাকায় এসব ট্রলার ডুবে যায় বলে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনে নিরাপত্তা টহল দেওয়ার সময় স্মার্ট প্যাট্রল টিমের সদস্যরা পাঁচটি ট্রলারডুবির সন্ধান পান। ওই সব ট্রলারের জেলেদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বাগেরহাটের শরণখোলার দুটি মাছধরা ট্রলার শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া এফবি কালাম ও এফবি খায়রুল ইসলাম নামের দুই ট্রলারে থাকা ৩৮ জেলেকে অন্য দুটি ট্রলারের জেলেরা জীবিত উদ্ধার করেছেন।

ঝড়ের কবলে পড়া লঞ্চযাত্রীদের উদ্ধার করল কোস্ট গার্ড

বরিশালের কালীগঞ্জে ঝড়ের কবলে পড়া লঞ্চের যাত্রীদের উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। বৈরী আবহাওয়ার কারণে লঞ্চটি উলানিয়া লঞ্চঘাটের পাশে ব্লকের ওপর উঠে যায়।

গতকাল শনিবার দুপুরে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাত  ৯টা ১০ মিনিটে ভোলা জেলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে এমভি আল-ওয়ালিদ-৯ নামের  লঞ্চটি ৬০ থেকে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। আনুমানিক রাত ১টায় কালীগঞ্জের উলানিয়া লঞ্চঘাটে অবস্থিত পন্টুনের পাশে যাওয়ার সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে পন্টুনের পাশে অবস্থিত ব্লকের ওপর উঠে যায় লঞ্চটি।

এ খবর কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অধীন কালীগঞ্জ কোস্ট গার্ড স্টেশনে পৌঁছলে দ্রুততার সঙ্গে লঞ্চে অবস্থানরত যাত্রীদের উদ্ধারে একটি বিশেষ উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। কোস্ট গার্ড সদস্যরা কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া যাত্রীদের উদ্ধার করেন।

১০ বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড

ভারতীয় কোস্ট গার্ড গতকাল শনিবার এক টুইট বার্তায় জানায়, তাদের জাহাজ আনমল গতকাল বঙ্গোপসাগর থেকে ১০ জন বাংলাদেশি জেলেকে উদ্ধার করেছে। নিখোঁজ আরো দুজন বাংলাদেশি জেলের খোঁজে ভারতীয় কোস্ট গার্ড অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button