বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

দারাজ, উবার, ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এর অভিযোগ

দারাজ, উবার, ফুডপান্ডাসহ বিদেশি কোম্পানিগুলোর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের লেনদেন অবৈধ উপায়ে হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।

সোমবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া বায়িং কমপ্লায়েন্স অ্যাওয়ারনেস ইনিশিয়াটিভ (আইএমবিসিআই) এর আয়োজনে ‘ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ইন ফরেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মস, এনসিওরিং কমপ্লায়েন্স ফর মিডিয়া অ্যান্ড কনটেন্ট সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক গোলটেবিলে এই অভিযোগ তোলা হয়।

দেশীয় ই-কমার্স, ডিজিটাল বায়িং বা মার্কেটিং এজেন্সি, ফিন্যান্সিয়াল ট্রানজেকশন কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম এই আইএমবিসিআই।

গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস আজকের ডিল এবং বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী ও প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাসরুর। ফাহিম মাসরুর বলেন, দারাজ, উবার, ফুটপান্ডার মতো বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে যে অর্থ খরচ করেন সেটি বৈধ উপায়ে নয়। ফেইসবুক, গুগল বা ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোতে এই কোম্পানিগুলো যে কোটি কোটি টাকা বিজ্ঞাপনবাবদ ব্যয় করে সেটি দেশের বাইরে হতে পরিশোধ হয়। এতে সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স বা পাওনা রাজস্বের কিছুই পায় না।

তিনি বলেন ‘এ দেশের ব্যবসার জন্য দেয়া বিজ্ঞাপনের টাকা সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স না দিয়ে বিদেশের কোনো জায়গা হতে পরিশোধ করা আইনগতভাবে অবৈধ। এটি সরাসরি মানি লন্ডারিং।’

ফাহিম মাসরুর বলেন, এতে একদিকে সরকার যেমন কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি দেশীয় উদ্যোক্তারা আইন মেনে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে অসম-অনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ছেন।

‘বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগের টাকা বাইরে হতে খরচের কোনো বৈধতা নেই। টাকাটা দেশে আনতেই হবে। দেশে এনে এরপর এখান হতে খরচ করতে হবে’ উল্লেখ করেন তিনি।

ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্ট এনালাইজেন বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিসালাত সিদ্দিক বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কমপ্লায়েন্সভাবে বিদেশে টাকা পাঠাতে গেলে ১০০ টাকায় বিদেশে যাবে ৮০ টাকা আর ২০ টাকা ট্যাক্স হিসেবে সরকার কেটে নেয়ার কথা। তার মানে আমি যদি ৮০ টাকা পাঠাই তার উপর ২৫ শতাংশ ট্যাক্স’‘দুটি মিলে এখন ১০০ এর উপর ২৫ টাকা এবং এই ২৫ এর উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ধরে সবমিলে ১৪৩ দশমিক ৭৫ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে’ উল্লেখ করে ব্যয়ের ধাপগুলো তুলে ধরছিলেন তিনি।

প্রিয়শপ ডটকমের সিইও এবং বেসিস ডিজিটাল কর্মাস স্থায়ী কমিটির কো-চেয়ারম্যান আশিকুল আলম খাঁন বক্তব্যে বলেন, বিদেশি এই অপারেটররা মানে দারাজ, উবার বা ফুডপান্ডার মতো কোম্পানিগুলোর ডিজিটাল মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিজ্ঞপনের বিল দেশের বাইরে হতে পরিশোধ করা হচ্ছে। এটা তো উম্মুক্তভাবেই সরাসরি মানি লন্ডারিং।

তিনি বলেন ‘আমরা কোনো কোম্পানিকে বাধা দিতে চাই না। আমরা চাই কমপ্লায়েন্স ইস্যুটা যেন স্মুথ হয়। আমাদের ২০০০ কোটি টাকার বাজার আর এর ৭০ শতাংশ এখন কমপ্লায়েন্স না। তার মানে এই ১৪০০ কোটি টাকার উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে সরকার কত টাকা বঞ্চিত হচ্ছে। কমপ্লায়েন্সের ৬০০ কোটি টাকার উপরে সরকার ২৫ শতাংশ পাচ্ছে অথচ ১৪০০ কোটি টাকার উপর কিছুই পাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনের বাজার ২ হাজার কোটি টাকা না ৫০০০ কোটি টাকা সেটিও জানার উপায় নেই। কারণ এই কোম্পানিগুলো কত টাকা খরচ করে সেটি তো জানা যাচ্ছে না। এর বেশির ভাগই হিসাবের মধ্যে রাখা যায় না। কারণ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা ও পণ্যের বিজ্ঞাপনের বিল অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বাইরে থেকে পরিশোধ করা হয়। এখানে বিদেশি কোম্পানিগুলো ৭০ টাকায় একটি বিজ্ঞাপন দিচ্ছে আর দেশীয় উদ্যোক্তারা সেটি ১৪০ টাকা, প্রায় ডাবল খরচ করে একই বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এটি অনেক বড় বাধা।

গোলটেবিলে আরও বক্তব্য রাখেন এসএসএল ওয়্যারলেসের পরিচালক এবং সিওও আশীষ চক্রবর্তী, ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি মাইন্ডস্কেপের পরিচালক আকিফ আহমেদসহ খাত সংশ্লিষ্টরা।

বক্তারা দাবি করেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দেশীয়দের এই বৈষম্য হতে সুরক্ষা জরুরি। বিদেশি কোম্পানিগুলোর ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের খরচ মনিটরিংয়ের মধ্যে আনার দাবির পাশাপাশি খাতটিতে এই করারোপেও ছাড় চান তারা। কমপ্লায়েন্স থাকার জন্য ব্যাপক সচেতনতা দরকার। আর বিদেশি কোম্পানিগুলোর এই মানি লন্ডারিং বা হুন্ডি বন্ধে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কার্যকর মনিটরিং প্রয়োজন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button