রংপুর বিভাগসারাদেশ

সৈয়দপুরে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের চাপে নি¤œমানের ওষুধ প্রেসক্রাইব

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতিতেও বন্ধ নেই নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারী ও বেসরকারী চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের আনাগোনা। বরং ব্যাপকহারে বেড়েছে । তারা জোড় করে রোগীদের ওষুধ ব্যবস্থাপনা পত্রের (প্রেসক্রিপশন) ছবি তুলে রাখছে। ফলে প্রায় ঘটছে রোগীদের সাথে বাক-বিতন্ডা চিকিৎসকরাও রোগীর চেয়ে তাদের বেশি সময় দিচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা ও রক্ষা হচ্ছেনা রোগীদের গোপনীয়তা। এতে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।

জানা যায়, সৈয়দপুর শহরে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রায় নয় শতাধিক বিক্রয় প্রতিনিধি কর্মরত আছেন। তাদের উপরে চাপ থাকে নির্দিষ্ট ওষুধ বিক্রি বাড়ানো। আর ওষুধ বিক্রি বাড়ানো ও লক্ষ্যমাত্রা পূরনে নির্ভর করে চাকুরীর পদোন্নতি ও বেতন-কমিশন। এই কারণে প্রেসক্রিশনে তাদের ওষুধের নাম লেখাতে প্রতিটি কোম্পানীর প্রতিনিধিরা অনেক সময় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, ওই টার্গেট অনুপাতে চিকিৎসকরা ওষুধ প্রেসক্রাইব করছে কি না পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কোম্পানীকে বিশ্বাস করানোর জন্য ব্যবস্থাপত্রের ছবি মোবাইলে তুলে ইমেইলে পাঠাতে হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ১০০ শয্যা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃবিভাগে সকাল ৮টা থেকে চিকিৎসক থাকা পর্যন্ত ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ভিড় লেগে আছে। চিকিৎসকের রুম থেকে রোগীরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার জন্য তা নিয়ে করা হচ্ছে টানাহেচড়া, এতে রোগীরা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। তাদের কোম্পানীর ঔষধ ঠিকমত লিখছেন কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্যই নাকি তাদের এসব করা। ওই হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, বিভিন্ন কোম্পানী প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লেখার জন্য প্রতিমাসেই নগদ অর্থসহ কলম, লেখার প্যাড, চাবির রিং থেকে শুরু করে টিভি ফ্রিজসহ নানা উপহার দিচ্ছেন চিকিৎসকদের। তাই প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ওই সব কোম্পানীর নি¤œমানের ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন চিকিৎসকরা।

হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রাবেয়া খাতুন জানান, আমি ডাক্তার এর রুম থেকে বের হতেই আমার কাছ থেকে স্লিপটি নিয়ে তারা ছবি তুলছে, আমি এর কিছু বুঝতেই পারলাম না। আরেক রোগী আরিফুল ইসলাম জানান, আমার বাচ্চা দুই দিন ধরে অসুস্থ তাই ডাক্তারকে দেখানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। টিকেট কেটে বসে আছি। কিন্তু ডাক্তারের রুমে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। অথচ বাইরে রোগীদের প্রচুর ভিড়। দীর্ঘক্ষণ ধরে আমরা অপেক্ষা করছি। শামসুজ্জোহা নামের আরেক রোগী বলেন, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর ডাক্তারকে দেখিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছি কিন্তু বিক্রয় প্রতিনিধিরা আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার হাতের কাগজ নিয়ে ছবি তুলছে। আমি ভেবেছি এরা হাসপাতালেরই কেও। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আলেমুল বাশার জানান, দুপুর ১২টার পর ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশের জন্য বলা হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button