সৈয়দপুরে চিকিৎসার নামে চলছে টেস্ট বাণিজ্য,পকেট কাটছে রোগীদের

নীলফামারী জেলা প্রতিবিধি: সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুরে গোলাহাট এলাকার জাহাঙ্গীর হেসেন নমের এক রোগী ঘাড়ে ব্যাথা নিয়ে যান অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে । ডাক্তার তাকে ঠিকভাবে না দেখেই রক্তসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা লিখে দিয়ে পাঠালেন পাশের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে পরীক্ষাগুলো বাবদ খরচ হয় প্রায় ৪ হাজার টাকা। পরে রিপোর্ট নিয়ে ওই ডাক্তারকে দেখানোর পর বলা হলো তেমন কোন কোনো রোগ নেই। ক্যালসিয়ম ও গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট লিখে দিয়ে বিদায় করে দিলেন তাকে। অপ্রয়োজনীয় টেস্ট ও অতিরিক্ত ফি আদায়ের এমন অভিযোগ অসংখ্য রোগীর । এ উপজেলার ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মেডিকেল টেস্ট ও কমিশন বাণিজ্যের ফাঁদ পেতে বসেছে । এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৫ থেকে ২৮ গুন বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে রোগীদের । আবার প্রতিষ্ঠান ভেদে একই টেস্টের মূল্য আদায় করা হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন। এক শ্রেণির ডাক্তারও এখন ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টারনির্ভর চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। নীতিমালা না থাকায় পকেট কাটছে এসব প্রতিষ্ঠান। বিপরতীতে অসহায় সাধারণ রোগীরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কতিপয় ডাক্তাররা অপ্রয়োজনীয় প্রতি টেস্টে ৫০ শতাংশ এবং প্রয়োজনীয় টেস্ট বাবদও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ টাকা পর্যন্ত কমিশন পাচ্ছেন। রক্ত-এমআরআই, সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় এভাবে দিনের পর দিন কমিশন নেওয়া হচ্ছে। অপ্রয়োজনে সব থেকে বেশি টেস্ট হচ্ছে রক্তের। ৫০ শতাংশ কমিশনও আসছে রক্ত থেকেই। এদিকে এসব টেস্টে ইচ্ছা মাফিক ফি নির্ধারণ করে সে টাকা পরিশোধে রোগীকে বাধ্য করা হচ্ছে। একই প্যাথলজিকাল মেশিন ও একই রিয়েজেন্টে টেস্ট সারেন সবক’টি ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টার। কিন্তু ফি টা প্রতিষ্ঠানভেদে ভিন্ন এবং খরচ ও সরকারি হাসপাতালের তুলনায় অনেক বেশি। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডায়াবেটিস (এইচবিএ১সি) টেস্টে ২’শ টাকা খরচের বিপরীতে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার , হেপাটাইটিস (এইচভি) ১’শ টাকার বিপরীতে ৫’শ থেকে ২ হাজার ৮০০, রক্তে সিবিসি ৫০ টাকার বিপরীতে ৪’শ থেকে ১ হাজার, প্রেগনেন্সি ১শ’ ৫০ টাকার বিপরীতে ৪’শ থেকে ৫’শ এবং যেকোনো রোগের এক্সরে-তে ৮০ টাকা খরচের বিপরীতে ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে ।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় নিবন্ধিত হাসপাতাল , ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টার রয়েছে ২২টি। এছাড়া রয়েছে নামে-বেনামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। নিয়মনীতির বালাই না থাকায় হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দিয়েই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের কাজ। একই সমস্যায় একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভিন্ন ভিন্ন রিপোর্ট পাওয়ার নজিরও রয়েছে । এসব রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। তারা জানান, ‘যত টেস্ট তত টাকা’ নীতিতেই চলছে এ উপজেলার একশ্রেণির ডাক্তারের অর্থ উপার্জনের বেপরোয়া কর্মকান্ড । এমন কর্মকান্ডে- পিছিয়ে নেই সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররাও। অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি স্থানীয় ১০০ শয্যা হাসপাতালে করা সম্ভব হলেও ডাক্তাররা রোগীদের পাঠিয়ে দেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। কমিশনের লোভে সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল বিভাগটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেওয়া হয় না। স্বাধিনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নীলফামারী জেলা কমিটির সভাপতি ডা: শেখ নজরুল ইসলাম জানান, ঢালাওভাবে সব ডাক্তারদের দোষারোপ করা ঠিক হবে না। তবে এমনটি যারা করেন তারা মহৎ এ পেশাকে কলঙ্কিত করছেন। ফি তারতম্যের বিষয় জানতে চাইলে সৈয়দপুর ডায়াগনিস্টিক মালিক সমিতির সভাপতি ও গ্রামীণ ডায়াগনিষ্টক সেন্টারের মালিক সৈয়দ মাহফুজ হোসেন পাপ্পু জানান, এর আগে সিভিল সার্জন মহোদয় টেস্ট ও এক্সের ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বললেও আজ অবধি তা নির্ধারণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির জানান, ডায়াগনিস্টিক ও প্যাথলজিকাল সেন্টারে নির্ধারিত ফি’র তালিকা প্রদর্শণ করা বাধ্যতামূলক। যদি কোন প্রতিষ্ঠান তা না করে তবে অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।