রংপুর বিভাগসারাদেশ

নীলফামারীতে চা চাষে ভিক্ষুকদের ভাগ্যের পরিবর্তন

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি : নীলফামারীতে পরীক্ষামূলক চা চাষে অভাবনীয় সাফল্যের পর বানিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে । সদর, কিশোরগঞ্জ ও ডিমলা উপজেলায় বর্তমানে চা চাষ হচ্ছে। এতে এলাকার ভিক্ষুকসহ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ভিক্ষুক পূণর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণ করেন। সেই কর্মসূচির আলোকে ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান সৃস্টির উদ্দেশ্যে প্রথমিকবাবে উপজেলার পরিত্যক্ত এক বিঘা জমিতে ২ হাজার চায়ের চারা রোপণ করেন। হলে অল্প দিনেই চায়ের সবুজ পাতা গজাতে শুরু করে। পরে উপজেলা পরিষদের পতিত প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে চারা রোপণ করা হয়।
২০১৫ সালের জুনে উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে এবং বাংলাদেশ চা বোর্ডের কারিগরি সহযোগিতায় সিনহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি প্রথমে ওই উপজেলার দেড় একর জমিতে ব্যবসার উদ্দেশ্যে চা চাষ শুরু করে। পরবর্তীতে দুই ধাপে তিন মৌজায় মোট ৩৫ একর জমিতে চা চাষ করছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি।
সিনহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি’র বাহাগিলি চা বাগানের ব্যবস্থাপক রিফাত হাসান জানান, ‘ উপজেলা প্রশাসনের পরামর্শে আমরা চা চাষ শুরু করেছিলাম স্বল্প পরিসরে। পরবর্তীতে লক্ষ্য করা যায় আলু কিংবা ভুট্টা থেকে চা চাষ অধিক লাভজনক। বর্তমানে আমরা ৩৫ একর জমিতে চা চাষ করছি। তিনি আরো জানান, ‘প্রথম পর্যায়ের ৭ একর জমির বাগানে এ পর্যন্ত আমরা ১ লাখ ২৫ হাজার কেজি চা বিক্রি করেছি। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৬ লাখ টাকা।’
ছাড়াও নীলসাগর গ্রুপের অনুভব চা বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়েছে। ক্ষুদ্র চা উৎপাদনকারী হিসাবে কিশোরগঞ্জ, ডোমার ও নীলফামারী সদর উপজেলার ১৩ জন কৃষক প্রায় ১৫ একর জমিতে ব্যক্তি উদ্যোগে চা চাষ শুরু করেছেন।
সমতল ভূমির চা বাগান-কিশোরগঞ্জ সরকারি, বাণিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় ৫৩ একর জমিতে এখন চা চাষ হচ্ছে। এসব চা বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। ফলে ওই পরিবারগুলোতে লেগেছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ছোঁয়া।
ময়নাকুড়ি চা বাগানে কর্মরত শ্রমিক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘ আগে ভিক্ষা করতাম । কিন্তু এখন চা বাগানে মজুরি যে মজুরী পাচ্ছি তা দিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি এবং পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছি। ‘
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন খামার সহকারি মো. জায়েদ ঈমাম জানান, ‘চা চাষের জন্য নীলফামারী জেলার মাটি খুবই উপযোগী। পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে ৩ বছরে পাতা উত্তোলন শুরু হয়, সেখানে এ এলাকায় দেড় থেকে দুই বছরে পাতা উত্তোলন হচ্ছে।’
জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, সরকারিভাবে চা নার্সারি তৈরির কাজ চলছে। এ ছাড়াও চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড নীলফামারী জেলায় ২৫ হেক্টর জমি চা চাষের আওতায় আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button