স্বাস্থ্য

সোরিয়াসিস রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

সোরিয়াসিস বিশেষ ধরনের চর্মরোগ, যা সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়। এ রোগের কারণে মৃত্যুও হয় না। দীর্ঘ মেয়াদে এই রোগের জটিলতা বাড়তে থাকে। নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

সারা বিশ্বে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে প্রচুর সোরাইসিস রোগী আছে। পুরুষ ও মহিলা সমান পরিমাণে হয়। শিশুদের অনেক সময় সোরিয়াসিস হয়। এটা একটা ক্রনিক ডিজিজ।

সোরিয়াসিস কী?

সোরিয়াসিস এমন একটা ডিজিজ যেখানে স্কিনটা খুব দ্রুত তৈরি হয় ফলে উপরে ২-৩ টা লেয়ার পরতে পরতে নিচে ১০-১২টা লেয়ার পড়ে যায়। যার কারণে জটিলতা তৈরি হয়। এটা একটা প্রবলেম যেটা অনেক সময় ফ্যামিলতে থাকে। সোরিয়াসিস অনেক সময় মাথার ওপর হতে পারে নেইলের ওপর হয়। এটা রেড কালার হতে পারে। স্কিনের ওপর মোটা লেয়ার যা ৭ দিনের মধ্যে ১০-১২ লেয়ার পড়ে যায়।

কনুই, হাঁটু ও জয়েন্টগুলোতে দেখা দেয়। এমনকি অল্প থেকে শুরু হয়ে সারা শরীর হয়ে যেতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস একটা অসুখ, হাই ব্লাডপ্রেশার একটা অসুখ তেমনি সোরিয়াসিস একটা ক্রনিক ডিজিজ। সোরিয়াসিস স্কিনের ওপর ব্যাপক আকারে হতে পারে।

সোরিয়াসিস হলে পেশেন্ট ডিপ্রেশনে থাকে এবং সবার সামনে যেতে তাই পেশেন্ট খুব অস্বস্তিতে পড়ে। তারা কাপড়-চোপড় পরলে লুকিংয়ের কথা চিন্তাভাবনা করে পরতে হয়।

সোরিয়াসিস কাদের হয়?

যেকোনো বয়সের নারী ও পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কেন এ রোগ হয়, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে বংশগত কারণেও এ রোগ হয়। মানুষের ত্বকের কোষ প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়। সোরিয়াসিস রোগীদের ক্ষেত্রে এই মারা যাওয়া কোষের সংখ্যা ও বিস্তারের মাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। ত্বকের সবচেয়ে গভীর স্তর থেকে মৃত কেরাটিনোসাইটস কোষ ওপরের স্তরে আসতে লাগে ১২০ দিন। কিন্তু সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রে সময় নেয় পাঁচ থেকে সাত দিন লাগে।

সোরিয়াসিস কেন হয়?

সোরিয়াসিস কেন হয় তা সায়েন্স এখনও ভালোভাবে জানে না। কিছু কিছু সময় কিছু কিছু মেডিসিনের জন্য সোরিয়িাসিস রোগ হতে পারে। আবার কোনো কোনো মেডিসিনে সোরিয়াসিস রোগ বেড়ে যেতে পারে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ সেবন এবং স্টেরয়েড-খেলে এটা বেড়ে যেতে পারে। মেডিসিন যেমন অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ বা সোরিয়াসিস আছে এমন মেডিসিন খেলে এ রোগ হতে পারে। ধূমপান, মদ্যপান, উচ্চ রক্তচাপের বিশেষ ওষুধ সেবন, সোরিয়াসিস হলে স্টেরয়েড খাওয়ার কোন অপশন নাই।

সোরিয়াসিস হলে কী করবেন?

এ রোগের কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে আসা উচিত। এ রোগের জন্য একজন ডার্মাটোলজিস্ট দেখাবেন। হাতুড়ে বা কবিরাজি চিকিৎসায় এ রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। আর চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলবো- রোগীদের কাউন্সিলিংটা খুব জরুরি। সবাই হয়তো মনে করে সোরিয়াসিস কখনো সারে না। এভাবে কখনই পেশেন্টদের বলা উচিত না।

সোরিয়াসিস হলে পেশেন্টকে লোশন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে এতে স্কিন স্ল্যাপিং আউট হয়ে যায় এবং জমতে পারে না।

এটা যেহেতু একটা ক্রনিক প্রবলেম তাই ধৈর্য ধরে চালাতে হয়। অপটিমাম ট্রিটমেন্ট করাটা খুব জরুরি। ওষুধ দিয়ে একটু র‌্যাপিং করলে ওষুধটা ভালোভাবে অ্যাবজোরভ করে। ভালোভাবে অ্যাবজোরভ করলে পেশেন্ট তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যায়। পেশেন্ট যখন মনে করে সোরিয়াসিস সারে না তখনই সমস্যাটা বেশি। এটার আসলে খুব ভাল ট্রিটমেন্ট আছে। ডার্মালোজিস্টের কাছে গিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান তৈরি করা উচিত। খাওয়ার ওষুধ আছে, লাগানোর ওষুধ আছে, কিভাবে লাগাতে হবে বুঝে নেন।

ফটোথেরাপি খুব ভাল ট্রিটমেন্ট। এটা কী করে করবেন তা বুঝে নেন।

কিছু বায়োলজিক ইনজেকশন আছে যা প্রচুর দাম ছিল আগে, এখন দাম কমে গেছে। সেসব খুব ভালো কাজ করে। অসুখ সারার পরে কী করলে স্কিনটা ভাল থাকবে ডার্মালজিস্টরা বলে দেবেন। মূল কথা হলো- ট্রিটমেন্টের ফলোআপটা বজায় রাখতে হবে।

সোরিয়াসিস জয়েন্টে হতে পারে। জয়েন্টে যদি পেইন থাকে তবে দ্রুত ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে যেতে হবে। জয়েন্টগুলো খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট করে ফেলে। তাই এটা তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট নেয়া জরুরি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button