দুর্যোগসারাদেশ

আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু শুঁটকির চাহিদা দেশজুড়ে

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু শুঁটকির চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। তাই এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এখন আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

উপজেলার শুঁটকি সংশ্লিষ্টরা মনেকরেন, উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজার দখলে নিতে পারবে আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহী এই শুঁটকি। আমারা বাঙ্গালী আর আমাদের চির চেনা একটি জনপ্রিয় খাবার শুঁটকি। তাই শুঁটকি মৌসুমে শুঁটকি তৈরিতে এখন চরম ব্যস্ত সময় কাটছে ব্যবসায়ীরা।

গত বছর এলাকায় বন্যা না হওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। এ জন্য শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক লোকসানের শিকার হয়ে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে এবার তারা কোমর বেঁধে শুঁটকি তৈরিতে ঝেঁপে পড়েছে। এলাকা জুড়ে এখন শুধু শুঁটকি তৈরীর ধুম পড়েছে। এবার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন পুকুর পুস্কুনি পানিতে ডুবে যাওয়ায় মাছের বিচরণ অনেক বেশি। তাই জলাসয়গুলোতে ধরা পড়ছে দেশীয় প্রজাতির অনেক রকমারী মাছ। আর এ মাছগুলো প্রতিদিন সেই কাকডাকা ভোর থেকে বিক্রি হচ্ছে আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহি মাছ বাজার রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন মাছেরআড়তে। এসব মাছ কিনে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।

তথ্যঅনুসন্ধানে জানাযায়, উত্তর জনপদের মৎস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত স্থান সমূহের মধ্যে আত্রাইও একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। প্রতিদিন শত শত টন টন মাছ আত্রাই উপজেলা থেকে রেল, সড়ক ও নৌ পথে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়। সে অনুযায়ী শুঁটকি উৎপাদনেও আত্রাইয়ের যথেষ্ট প্রসিদ্ধ রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরঞ্চলের রংপুর, নিলফামারী, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের প্রায় ২০/২৫ জেলাতে বাজারজাত করা হয় আত্রাইয়ের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মাছ। আর এ মাছের শুঁটকি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন প্রায় শতাধিক পরিবার। উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রাম শুঁটকি তৈরীতে বিশেষভাবে খ্যাত। এ গ্রামে শতাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। শুধু বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরী করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে তারা পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষন নিশ্চিত করেন। কিন্তু গত বছর বাজার মন্দা থাকায় এসব শুঁটকি ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কাঁচা মাছের আমদানী কম, বাজারে মূল্য বেশি, অথচ শুঁটকির বাজারে ধস। সব কিছু মিলিয়ে তাদের গত বছরের চালান প্রতি লাভের স্থলে গুনতে হযেছিল অনেক লোকসান। মাছের ব্যাপক আমদানী, মূল্য কম এবং শুঁটকি বাজার মূল্য বেশি থাকায় তাদের চোখে-মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠেছে।

ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের বিশিষ্ট শুঁটকি ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোল্লা বলেন, শুঁটকি ব্যবসার সাথে আমি দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত। শুঁটকি তৈরীতে অর্থ খরচের সাথে সাথে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় হয়।

শুঁটকি ব্যবসায়ী রাম, মাজেদুল, পচু, গেদা ও ছাত্তার বলেন, সর্বপোরি আমরা রৌদ্র বৃষ্টি ও মাছের র্দুগন্ধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্রাইয়ের শুঁটকির চাহিদা আছে। এবারের ব্যবসাটা লাভজনক হবে বলে আমরা আশাবাদি।

এ বিষয়ে এলাকার সচেতন মহল মনে করেন ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হলে প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সঙ্গে সঙ্গ দেশের শুঁটকি শিল্পে বিপুলসংখ্যক এ উপজেলার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button