আন্তর্জাতিক

কাবুল বিমানবন্দরে জোড়বোমা বিস্ফোরণে নিহত ৬০

পশ্চিমা সৈন্য-নাগরিক ও আফগান সহযোগীদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপক তোড়জোড়ের মধ্যে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার হুমকির মধ্যেই এই বিস্ফোরণ ঘটল। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণে অন্তত ৬০ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ১৪০ জন।
এদিকে তালেবান বলছে, এ ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্কাই নিউজ ও দ্য গার্ডিয়ানের খবরে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে। হামলায় বহু মানুষ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে মার্কিন সেনারাও রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই খবর লেখা পর্যন্ত কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি। এদিকে কাবুলে উড্ডয়নের পরপরই একটি ইতালীয় বিমান গুলির মুখে পড়ে। আর তালেবানের পক্ষ থেকে দেশে সঙ্গীত নিষিদ্ধ করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটের প্রবেশদ্বারে বিস্ফোরণ ঘটেছে, যেখানে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ব্রিটিশ সেনারা অবস্থান করছিল। সন্ত্রাসী হামলার হুমকির সতর্কতার কারণে বন্ধ করে দেওয়া তিনটি গেটের একটি ছিল এই গেট। গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতনের পর তালেবানের শাসনের ভয়ে দেশ ছাড়তে মরিয়া হাজার হাজার মানুষ এই গেটে অবস্থান করছেন।
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বৃহস্পতিবার এক টুইট বার্তায় বিস্ফোরণে মার্কিনিসহ অন্যদের হতাহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন। এদিকে আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের বিষয়টি এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে জানানো হয়েছে। স্কাই নিউজের খবরেও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে এই বিস্ফোরণকে সম্ভাব্য ‘আত্মঘাতী হামলা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএসআইএস-কে) আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে।
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো আফগানদের কাবুল বিমানবন্দর যাওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষিত মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে মারাত্মক হামলার কথা ওঠায় আফগানদের সরানোর প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর থেকেই কাবুল বিমানবন্দরে জড়ো হতে শুরু করে আতঙ্কিত আফগানরা। সেখান থেকে তাদের সরিয়ে নিতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ। বুধবার সন্ধ্যায় এক সতর্কবার্তায় কাবুলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিমানবন্দরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। শুধুমাত্র সরকারি প্রতিনিধিদের নির্দেশনামতো তাদের যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে নিজেদের নাগরিকদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়া অন্য দেশগুলোও ৩১ আগস্ট মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে সামনে রেখে এমন সতর্কতা জারি করে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর বুধবার রাতে এক সতর্কবার্তায় নিজেদের নাগরিকদের বিমানবন্দর এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়। সতর্কবার্তায় বলা হয়, সন্ত্রাসী হামলার বড় আশঙ্কা রয়েছে। সবাই বিমানবন্দর এড়াবেন এবং নিরাপদ অবস্থানে থাকবেন।
বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস হ্যাপি বলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরে ‘মারাত্মক হামলা’ হতে পারে। অস্ট্রেলিয়াও তাদের নাগরিকদের বিমানবন্দর থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানায়। বেলজিয়ান প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার ডি ক্রোকো বলেন, তারা এমন হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন। আগে থেকেই মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা আইএসের হামলার ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে আসছিল।
কাবুলে উড্ডয়নের পরপরই ইতালীয় বিমানে গুলি
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই ইতালির একটি বিমান লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইতালির সামরিক বাহিনীর ওই বিমান কাবুল বিমানবন্দর থেকে উড়ার পরই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা বলেছে, বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর ইতালীয় সামরিক বাহিনীর একটি পরিবহন বিমান লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় বিমানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী আফগান নাগরিকদের পরিবহনকারী ওই বিমানে হামলার দায়ও স্বীকার করেনি। ইতালির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, সম্ভবত তাদের বিমানকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা করা হয়নি। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়া হয়েছে। বিমানটির যাত্রী ইতালীয় এক সাংবাদিক সংবাদমাধ্যম স্কাই২৪টিজিকে বলেছেন, ইতালির ওই বিমানে প্রায় ১০০ বেসামরিক আফগান নাগরিককে পরিবহন করা হচ্ছিল। কাবুুল থেকে উড্ডয়নের পরই বিমানটি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ হচ্ছে সঙ্গীত
নব্বইয়ের দশকে তালেবান শাসনকালে দেশটিতে সঙ্গীত, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র কড়াভাবে নিষিদ্ধ ছিল। আর কেউ এই নিয়ম অমান্য করলে তাকে গুরুতর শাস্তি পেতে হতো। এবারও তাই ঘটতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ।
নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছেন, ‘ইসলামে সঙ্গীত নিষিদ্ধ…তাই আশা করছি, আমরা লোকজনকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার বিষয়টি বোঝাতে পারব।’
২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে তালেবান উৎখাত হলে দেশটিতে সঙ্গীতচর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটে। সেখানে প্রচুর কনসার্ট ও উৎসব হতো। এমনকি আফগানিস্তানে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মিউজিক প্রতিষ্ঠা হয়, সেখানে নানা অনুষ্ঠানও উদযাপন করা হয়। পাশাপাশি দেশটির সব নারী অর্কেস্ট্রা দেশে ও বিদেশে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তবে তালেবানের শাসনে সেই বাস্তবতা বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন জাবিউল্লাহ।
নারীদের ভ্রমণকাল ২ দিনের বেশি হলে লাগবে পুরুষ অভিভাবক
জাবিউল্লাহ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ‘ভিত্তিহীন’। তিনি বলেন, নারীদের সব সময় ঘরেই থাকতে হবে বা মুখ ঢেকে রাখতে হবে, এমন নয়। তিনি বলেন, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীরা বাইরে বের হতে পারবেন না, এটাও ঠিক নয়। যেসব নারী তিন দিন বা এর বেশি সময়ের জন্য কোথাও যেতে চান, সেখানে পুরুষ অভিভাবক লাগবে। নারীরা আগের মতোই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার জাবিউল্লাহ যথাযথ নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত সুরক্ষার খাতিরে নারীদের বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেন। কারণ হিসেবে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আমাদের নতুন সদস্যদের নিয়ে চিন্তিত। তারা এখনও সুপ্রশিক্ষিত নন। তাই তারা নারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসতে পারেন।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button