আন্তর্জাতিক

নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে: জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ

তিন দশকে জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ কি শেষ হয়েছে? না, তা একেবারেই হয়নি বলে মনে করছেন ডয়চে ভেলের কাই-আলেক্সান্ডার শলৎস৷ নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নিয়ে সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷

দুই জার্মানির বিভাজনের কারণে অনেক পরিবার ভাগ হয়ে গিয়েছিল, ভাইবোনরা পৃথক হয়ে গিয়েছিল, শিশুদের চাচা-চাচী, খালা-খালুদের সীমান্তের অপর প্রান্তে চলে যেতে হয়েছিল৷ বিভাজনের সময়টায় যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন, তাঁদের অনেকে এর মধ্যে মারা গেছেন কিংবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন৷ কয়েক বছরের মধ্যে তাঁরা সবাই হারিয়ে যাবেন৷ প্রাপ্তবয়স্ক এই মানুষরা বিভাজনকে ভুল হিসেবে দেখেছেন৷ এটি দুর্ভোগ বয়ে এনেছে এবং তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে বলে মনে করতেন৷ তাই তো পশ্চিম জার্মানিতে বাস করা মানুষরা পূর্ব জার্মানিতে বাস করা তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য কফি, ফল, পোশাক, চকলেট ইত্যাদি নিয়ে গিয়ে ‘জার্মান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক’ বা জিডিআর সীমান্তে দিয়ে আসতেন৷

এই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের সন্তানেরা, যাঁদের জন্ম সত্তর ও আশির দশকে, তাঁদের জীবনে জার্মানির বিভাজন একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে৷ কারণ, তাঁরা জন্মেই হয় পূর্ব জার্মানিতে, নয় পশ্চিম জার্মানিতে বাস করেছেন৷

বার্লিন প্রাচীর পতনের পর

১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বার্লিন প্রাচীরের পতন হয়৷ তারও একবছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ সম্পন্ন হয়৷ শুরুতে এই বিষয়টি নিয়ে সবাই খুবই আনন্দিত ও উত্তেজিত ছিলেন৷ সেই সময়টা পার হওয়ার পর একসময় পূর্ব জার্মানি তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে৷ আজও পশ্চিমে বাস

করা প্রায় ২০ শতাংশ জার্মান কখনো পূর্বে যায়নি৷

১৯৮৯ সালের পর পূর্ব জার্মানির উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে৷ পূব জার্মান সরকারের অধীনে থাকা প্রায় আট হাজার প্রতিষ্ঠান ও সেখানে কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল৷ এই ট্রাস্ট কিছু প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারী করতে পেরেছে৷ তবে সেই প্রক্রিয়ায় অনেকে চাকুরিচ্যুতও হয়েছেন৷ ফলে চাকরি হারানো ব্যক্তিদের একসময় মনে হয়েছে, বিভাজনই ভালো ছিল৷

রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয় নিয়ে বেশি কথা বলতো না৷ তারাও দুই জার্মানির একত্রীকরণের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল৷ তবে অর্থনৈতিক তথ্যাদি উপস্থাপন করে সেই সময়কার সরকার গর্বভরে দেখাতো যে, পূর্ব জার্মানিতে অনেক উন্নতি হচ্ছে৷ সেটা ঠিকও ছিল৷ কিন্তু এটা করতে গিয়ে যে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, সেটা নিয়ে আলোচনা হতো না৷ পূর্বের মানুষরা যখন এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইতেন, তখন পশ্চিমে থাকা তাঁদের ভাইবোনেরা তাঁদের সবসময় নেতিবাচক গল্প বলা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন৷

অর্থাৎ, এই বিষয়ে স্পষ্ট সুরাহা এখনো হয়নি৷ কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে, বিতর্কিত যে বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় না, সেগুলো একেবারে হারিয়ে যায় না, বরং ভবিষ্যতে আবারও সেগুলো সামনে আসে৷

জার্মানির পপুলিস্ট পার্টি এএফডি ইতিহাসের এই শিক্ষা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে৷ ‘একত্রীকরণ সম্পূর্ণ করো’ এই স্লোগান দিয়ে সম্প্রতি দলটি পূর্বাঞ্চলের রাজ্য নির্বাচনগুলোতে সফল হয়েছে৷

নতুন প্রজন্মের দায়িত্ব

জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ এখনো শেষ হয়নি৷ বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদিরা যে বিতর্কের সমাধান করতে পারেনি, বা চায়নি, তা করার দায়িত্ব এখন তাঁদের ছেলেমেয়ে কিংবা নাতি-নাতনিদের নিতে হবে৷ তাঁরা কি তাঁদের পূর্বসূরিদের নীতিই টেনে নিয়ে যাবে, নাকি পরিবর্তনে আগ্রহী হবে, তার ওপরই পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানদের মধ্যে ভবিষ্যতে সম্পর্ক ঠিক হবে৷

নতুন প্রজন্ম ও রাজনীতিবিদরা যদি সাহস করে বিতর্কিত বিষয়ের সমস্যা না করে অন্যদের রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য ছেড়ে দেয়, তাহলে সেটি লজ্জার হবে৷

পূর্ব আর পশ্চিমকে আবার কখনো বিভাজিত হতে দেয়া উচিত হবে না!

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button