জাতীয়

ওয়ার্ডবয়রা রোগীদের ছুঁয়েও দেখছেন না

নগরীর গোসাইলডাঙ্গা থেকে করোনায় আক্রান্ত রোগী কানাইলাল সূত্রধরকে তার ছেলেরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা সরাসরি করোনা ইউনিটে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সমস্যা হলো কানাইলালকে বহন করার কোনো স্ট্রেচার পাওয়া যাচ্ছিল না। ওয়ার্ডবয়কে অনেক করে বললেও তারা রোগীর স্বজনদের পাত্তা দেননি। উপায় না দেখে কানাইলালকে তার ছেলেরা কাঁধে করে করোনা শয্যায় নিয়ে যান। কানাইলালের ঘটনাই এখন চমেক হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। অভিযোগ আছে, করোনা ইউনিটের ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা রোগীকে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখছেন না, তারা টাকার জন্য রোগী বহনকারী সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখেন। টাকা দিলে অদৃশ্য স্থান থেকে ঠিকই বের হয়ে আসে রোগী বহনের সরঞ্জাম।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা করোনা রোগী স্বজনদের কোনো কথাই শুনছেন না। উল্টো তারা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। এক ওয়ার্ডবয়কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা আমাদের কী মনে করেন? আমরা তো মানুষ। রোবট তো নই! এতো এতো রোগী। আমরা ওয়ার্ডবয় আর আয়া আছি মাত্র কয়েকজন। তা হলে আমরা কোনদিক সামলাব বলেন? তিনি উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন সাংবাদিকের প্রতি।

জানা যায়, ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা করোনা রোগীদের ছুঁয়ে না দেখা ও রোগী বহনের সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখার কারণে স্বজনরা নিজেরাই সংক্রমিত হচ্ছেন। এ দিকে স্বজনরাও করোনা ইউনিটে প্রবেশের সময় পরেন না কোনো সুরক্ষা সামগ্রী। মাস্ক ছাড়া কোনো সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ তাদের নেই। আবার রোগী ভর্তির পর স্বজনরা হাসপাতাল ও সামনের কেন্টিনসহ সবখানে ইচ্ছেমতো ঘুরাফেরা করছেন। ফলে নিজেরা যেমন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তেমনি অপরের মাঝেও ছড়াচ্ছেন।

পটিয়া থেকে আসা করোনা রোগীর স্বজন তকির আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, আমার ভাই করোনা পজিটিভ। তাকে আমি কোলে করে করোনা ইউনিটে নিয়ে এসেছি। কেউ সাহায্য করেনি। আপনি নিজেওতো করোনা পজিটিভ হয়ে যাবেন। জবাবে তকির বলেন, আমাদেরতো আর কোনো উপায় নেই!

ওয়ার্ডবয়দের এমন অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন চমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ও সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভা-ার) ডা. মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, করোনা ইউনিটের ওয়ার্ড বয় ও আয়াদের বিরুদ্ধে এক সপ্তাহ আগে থেকেই আমরা এমন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। কোনো রোগী ভোগান্তিতে পড়লে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরও বলেন, আমরা করোনা ইউনিট পরিদর্শনের সময় ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা ঠিকমতো সেবা দেন। আমাদের আসার কথা তারা আগে থেকে জেনে যান।

চমেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি আছে ২৯৮ জন। এর মধ্যে রেড জোনে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৭৯ জন। তারা সবাই করোনা রোগী। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১১৯ জন। চমেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য শয্যা আছে ৩০০টি। আর এইচডিও ও আইসিইউ শয্যা আছে ২০টি। এই ২০টি শয্যায়ও রোগী ভর্তি। ফলে এখানে করোনা ইউনিটে কোনো শয্যাই খালি নেই। এ ছাড়া এই হাসপাতালে সাধারণ রোগী ভর্তি আছে ১ হাজার ৯৮৬ জন। তাদেরও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিনই করোনা রোগী বাড়ছে। চমেক হাসপাতালে আগে ছিল ১০০ শয্যার করোনা ইউনিট যা এখন ৩০০ শয্যা করা হয়েছে। আরও ১০০ শয্যা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে কেবল শয্যা বাড়ালে তো আর হয় না। অন্য সবকিছুও লাগে। তবে দিনকে দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

চট্টগ্রামে শনাক্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড : চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, শনাক্ত ও মৃত্যু দুদিক থেকেই নতুন রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম। এই প্রথমবারের মতো গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনা শনাক্ত হলো ১ হাজার ৩১০ জন। এর আগে চলতি মাসেই একবার ১০০৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেলেন ১৮ জন। এটিও চট্টগ্রামের জন্য নতুন রেকর্ড। ১৮ জনের মধ্যে ১১ জনই উপজেলার বাসিন্দা।

তিনি বলেন, এ দিকে চট্টগ্রামে একদিনে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩১০ জন। আর মারা গেছেন ১৮ জন। এটি চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যু। এখন চট্টগ্রাম জেলায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৫২১ জন। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ৯১৫ জন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button