জাতীয়

করোনায় ঈদকেন্দ্রিক রাজনীতি বিলুপ্তপ্রায়!

দেশে ঈদকেন্দ্রিক রাজনীতির একটি চল ছিল। সেই রাজনীতি ছিল আন্দোলনের। ঈদকে উপলক্ষ করে নেতা-কর্মীদের সমবেত করার, সাধারণ মানুষের মধ্যে ঈদ উপহার বিতরণ করার। করোনাকালে গত চার ঈদে এর কোনোটিই দেখা যায়নি।

বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর পরের রোজা ও কোরবানির ঈদে করোনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। আর এবারো ঈদ ও কোরবানির সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। কোনো ঈদেই অবশ্য সাধারণ মানুষকে থামিয়ে রাখা যায়নি। তারা যে করেই হোক লকডাউন আর সীমিত বিধিনিষেধ যা-ই হোক না কেন গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। যদিও গত দুই বছর ধরে কোরবানি শতকরা ২০ ভাগ কম হয়েছে। কিন্তু ঈদের রাজনীতি, ঈদ পরবর্তী রাজনীতি আর সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাজনীতিবিদদের ঈদ বলতে গেলে হচ্ছেই না।

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১৮ হাজার ৪৮৯ জন। শনাক্ত হয়েছেন ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৩ জন। এখন সংক্রমণের হার ৩০.৪৮ ভাগ। এই ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে বাংলাদেশের আবার কঠোর লকডাউনে যাওয়ার কথা রয়েছে। গত বছর সাধারণ ছুটির নামে ৬৬ দিনের লকডাউন দেয়া হয়। এ বছর ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন ছাড়াও সব সময়ই নানা ধরনের বিধিনিষেধ চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত বছরের মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে।

নানা সূত্র থেকে খবর নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৮০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মন্ত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ জন। সংসদ সদস্য করোনায় মারা গেছেন দুই জন। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ মারা গেছেন করোনায়।

করোনায় সারাদেশে আওয়ামী লীগের এক হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক হাজার। বিএনপির হিসেবে তাদের চার শতাধিক নেতা-কর্মী এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন। আর আক্রান্ত কয়েক হাজার। দুই দলের পক্ষ থেকেই এখন সুস্থ থাকার নির্দেশনাই প্রধান।

আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, ‘এই সময়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা হলো, কোনো দলীয় রাজনীতি নয়, যার যার অবস্থান থেকে মানবতার জন্য কাজ করতে হবে। আমরা তা-ই করছি। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলো, মুভ না করে যে যেখানে আছেন সেখানে অবস্থান করবেন। সেখান থেকেই কাজ করবেন।’

গত দুই বছর ধরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন না। বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় বাতিল করছেন করোনার কারণে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারো অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি ঢাকায় আছেন। তারা এলাকায় যাননি। যারা আগে থেকেই এলাকায় আছেন, তারাই রয়েছেন। তবে তারা জনসংযোগ বা সাধারণ মানুষের সাথে মেলামেশা করছেন না। বিএনপিরও একই অবস্থা। তাদের এমপি, নেতারাও ঢাকায় অবস্থান করছেন।

বিএনপির এমপি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘করোনা শুধু বাংলাদেশে নয় এটা একটা বৈশ্বিক মহামারী। তাই বিএনপির মাঠের রাজনীতি বন্ধ আছে। আর নেতা-কর্মীরা এই ঈদে যার যার অবস্থানে থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে সাধারণ মানুষকে সহায়তা করছেন।’

আন্দোলন সংগ্রামের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আগেও এই সরকার করতে দেয়নি আর করোনায় তো পরিস্থিতি আরো খারাপ। এখন গণতন্ত্র নেই, কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সেটা থাকলে এই করোনা মোকাবিলায় আমরা সবাই মিলে অংশ নিতে পারতাম।’

তিনি আরো জানান, সংসদে তারা করোনার মধ্যেও সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এমপিদের প্রতি দুই দিন পর পর করোনা টেস্ট করা হয়। যারা নেগেটিভ হন কেবল তারাই অধিবেশনে যেতে পারেন।

রাজনীতির বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনূ মজুমদার বলেন, ‘করোনার বাইরেও রজনীতিতে এক ধরনের অদ্ভুত পরিবর্তন আসছে। রাজনীতি যেন না-ই হয়ে যাচ্ছে। বিএনপি করোনার আগেও সংগঠিত ছিল না। আর এখন তো নয়ই। তাদের নেতৃত্বের সংকট, ইস্যু এগুলো এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু আমি বলবো, সরকারি দল আওয়ামী লীগ থেকে রাজনীতি হাওয়া হয়ে গেছে, যা বিস্ময়কর। এই করোনায় রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহণ নেই, যেন সব কিছুতে ‘আমলায়ন’ হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। আর যাদের ইতিহাস জনসম্পৃক্ত নয়, তারা সংকটে টিকে থাকতে পারে না। করোনায় সেটা স্পষ্ট হয়েছে।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button