জাতীয়

ক্যাসিনোর টাকা কোথায় রেখেছেন সম্রাট?

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ১৯তম দিনে এসে র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন এই জুয়াকাণ্ডের ‘নেপথ্যের কারিগর’ ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে রবিবার (৬ অক্টোবর) ভোরে গ্রেফতারের পর ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এই সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতিকে ঢাকায় আনা হয়। এদিন দুপুর থেকে একযোগে তল্লাশি চলে তার কার্যালয় এবং শান্তিনগর ও মহাখালীর বাসায়। তিনটি স্থান থেকে মদ, ইয়াবা ইত্যাদি জব্দ করলেও ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত অর্থের কোনও সন্ধান পায়নি র‍্যাব।

এর আগে ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া যুবলীগ নেতা খালিদ ও শামীমের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করা হলেও সম্রাটের কাছে বড় অংকের নগদ টাকার কোনও সন্ধান পাননি র‌্যাবের সদস্যরা। তাদের ধারণা, অভিযান শুরু হয়েছে ১৮ দিন আগে। এরই মধ্যে নগদ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া, সম্রাটের বিরুদ্ধে দেশের বাইরেও অর্থ পাচারের তথ্য রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে। সম্রাটের টাকা কোথায়, কী পরিমাণ রয়েছে—এই তথ্যের সন্ধান করছেন র‌্যাবের গোয়েন্দারা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সম্রাটের অর্থ ও সম্পদ সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। রিমান্ডে এনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সেগুলোর সন্ধান করা হবে।’

রবিবার (৬ অক্টোবর) দুপুর থেকে কাকরাইলে সম্রাটের কার্যালয়, মহাখালী ডিওএইচএস ও শান্তিনগরের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। কাকরাইল কার্যালয় থেকে ক্যাঙ্গারুর দু’টি চামড়াসহ একটি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দু’টি বৈদ্যুতিক টর্চার মেশিন, ১৯ বোতল বিদেশি মদ ও এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‍্যাব।

মহাখালীর ডিওএইচএস-এর ২৯ নম্বর রোডের ৩৯২ নম্বর বাসার তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ কিছু পায়নি র‌্যাব। অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ কিছু পাইনি।’

শান্তিনগরের বাসা থেকেও মোটা অংকের কোনও টাকা পাননি র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক সাফিউল্লাহ বুলবুল  বলেন, ‘শান্তিনগরের বাসাটি ছিল সম্রাটের ভাইয়ের। ওই বাসা থেকে ৫০ হাজার ৬০০ টাকা, ১৬০০ ইউএস ডলার, ৪ হাজার ১০০ ইন্ডিয়ান রুপি, ৩৩২ সিঙ্গাপুরি ডলার, ৩০ পিস জুয়েলারি, চারটি চেকবই, একটি নোটপ্যাড, একটি আইপ্যাড, চারটি ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয়। রাজধানীতে স্পোর্টস ক্লাবের আড়ালে ক্যাসিনোর সন্ধান পায় র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় নগদ টাকা, মাদক ও ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম। প্রথম দিনেই গ্রেফতার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। পরবর্তীতে ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয় যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীমকে (জি কে শামীম)। এই দু’জনসহ অভিযানে গ্রেফতার অন্যদের কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান, যুবলীগ নেতা সম্রাটের হাত ধরেই রাজধানীর ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো শুরু হয়। তিনিই নেপথ্যের কারিগর। আর এই ক্যাসিনো থেকে আসা অবৈধ অর্থের একটা অংশ নিয়মিত পেতেন সম্রাট। এছাড়া, কয়েকটি ক্লাব সম্রাট নিজেই পরিচালনা করতেন।

অভিযান শুরুর একসপ্তাহের মধ্যেই ২৪ সেপ্টেম্বর ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি)। চিঠি পাওয়ার পর দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে হিসাব জব্দ করার বিষয়ে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ।

ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মো. রাজি হাসান রবিবার (৬ অক্টোবর) রাতে  বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধান চলছে। আমরা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেবো। সে অনুযায়ী তারা কাজ করবেন।’

সম্রাটের অর্থের সন্ধানে র‌্যাব সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। সম্রাটের অর্থ যেসব জায়গায় রয়েছে, সেখানেও আমাদের অভিযান চলবে।’

অবৈধ অর্থ উপার্জন ও মানি লন্ডারিং প্রসঙ্গে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘আমরা মানি লন্ডারিংয়ের তথ্যপ্রমাণ পেলে তার (সম্রাট) বিরুদ্ধে সে আইনে মামলা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কোথাও সম্রাটের টাকা রয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button