রংপুর বিভাগসারাদেশ

সৈয়দপুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে বহুতল ভবন নির্মাণ

নীলফামারী: অগ্নিনির্বাপনসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের অধিকাংশ বহুতল ভবন। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। ভবন নির্মাণে জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা (ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড) মানা না হলেও তা দেখার কেউ নেই।
ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। দীর্ঘদিন ধরে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করে আসছেন তারা। জাতীয় বিল্ডিং কোড অনুযায়ী বহুতল ভবন নির্মান করতে হলে অবশ্যই অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কাজের সময় শ্রমিকের হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। যারা কংক্রিটের কাজে যুক্ত তাদের হাতে গ্লোভসও পরতে হবে। চোখের জন্য ক্ষতিকর কাজ যেমন ড্রিলিং, ওয়েল্ডিং, ঢালাইয়ের সময় চশমা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ওয়েল্ডার ও গ্যাস কাটার ব্যবহারের সময় রক্ষামূলক সরঞ্জাম যেমন গ্লোভস, নিরাপত্তা বুট ও অ্যাপ্রোন ব্যবহার করতে হবে। ভবনের উপরে কাজ করার সময় শ্রমিকের নিরাপত্তায় বেল্ট ব্যবহারও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বিল্ডিং কোডে। তবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ জায়গায় উপেক্ষিত রয়েছে শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি।
উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা,শ্রম আইনে সব জায়গায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বলা থাকলেও ঠিকাদার, উপ-ঠিকাদার ও ভবন নির্মাণকারীরা কখনও অবহেলা, কখনও অতি লোভের কারণে তা এড়িয়ে যান। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ৭ জন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। চলতি বছরের গত অক্টোবর মাসে সৈয়দপুর -পার্বতীপুর সড়কে সাইল্লার মোড়ে একটি ভবন নির্মানকালীন ছয়তলা থেকে পড়ে গিয়ে মইনুল ইসলাম নামের একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, মালিকরা নিরাপত্তা দিতে নারাজ। আজকে কোনো শ্রমিক যদি বলেন আমাকে নিরাপত্তা দেন, আগামীকাল তাকে দিয়ে কাজ করানো হবে না।
নির্মাণ শ্রমিকদের রাজমিস্ত্রি জোগানদার সামসাদ আলম বলেন, পেটের দায়ে আমাদের কাজ করতে হয়। মৃত্যু ভয় থাকলে বাড়িতে বসে থাকতে হবে। তিনি বলেন, কনট্রাক্টর দড়ি আর বাঁশ দিয়ে বলেন, ‘মাচা বানিয়ে কাজ কর।’ আমাদের নিরাপত্তায় আর কিছুই দেওয়া হয় না। শহরের নয়া বাজারে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ তলায় রড বাঁধাইয়ের কাজ করছেন তিন শ্রমিক। ছাদের একেবারে প্রান্তে দাঁড়িয়ে কাজ করলেও তাদের কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। ভবনের চারপাশে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনীও করা হয়নি। তবে ভবন নির্মাণকারী একাধিক মালিক ও ঠিকাদার শ্রমিকদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলেই অন্যান্য খাতের তুলনায় নির্মাণ খাতে দুর্ঘটনার হার কম।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button