যুক্তরাষ্ট্র যে কারণে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতবে না
দিন যত পার হচ্ছে, উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তেহরান এবং ওয়াশিংটনও সংঘাতের দিকে ঝুঁকছে। যা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধে গড়াতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে গত শনিবার সৌদি আরবের দুটি তেল কারখানায় ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটে। তা নিয়ে উত্তেজনা আরো চরমে উঠেছে। সৌদি সরকার নিয়ন্ত্রিত আরামকোর ওই দুই তেল কারখানায় হামলার মদদদাতা হিসেবে ইরানকে দোষী করা হচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত বলেছেন, ইরানকে এই হামলার জবাব দেওয়ার সময় চলে যায়নি। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের এবং মিত্রদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রস্তুত।
ইরান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণে এটা স্পষ্ট যে, তিনি ঝামেলায় জড়াতে চান। অন্যদিকে ইরান রাজনৈতিকভাবে, কূটনৈতিকভাবে, তথ্য নিয়ে এমনকি সামরিক ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কোনো দিনই সেনা সংঘর্ষ চাইবে না। এর আগে ১৯৮৮ সালে ইরানের বিমান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধে মার্কিন বাহিনীর। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বড় ধরনের সংঘর্ষ। দু’দেশই তার পুনরাবৃত্তি পছন্দ করবে না।
ইরান কিংবা যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, তা থেকে যে কারো মনে হতে পারে যুদ্ধ ছাড়া শান্তি নেই। কিন্তু এ ধরনের বক্তব্য থেকে তারাই লাভবান হচ্ছে। দুই দেশই এ ধরনের হুমকি-ধমকিতে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতাবান হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। আর এ জন্য দু’দেশেরই তেমন কোনো খরচও হচ্ছে না।
একদিকে ইরানের মানুষদের বোঝানো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ ছাড়া শান্তি আসবে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও বোঝাচ্ছে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের প্রকৃতি, জটিলতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, অদক্ষতা এবং নমনীয়তার অভাব। যুদ্ধ ছাড়া শান্তি নেই মতবাদকে বজায় রাখা হচ্ছে সেখানেও।
গত ৩০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারাই ইরান বিরোধী মনোভাব ধরে রেখেছে। পক্ষান্তরে সিরিয়ায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তেমন কিছুই পায়নি। অন্যদিকে সেনা থেকে শুরু করে দক্ষতা, রাজনীতি কিংবা কূটনৈতিক দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে গেছে। যা যুদ্ধ জয়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
মার্কিন কূনীতিবিদরাও স্বীকার করছেন, ইরান কূটনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে গেছে। তারা এখন যুদ্ধে জেতার জন্য অনেক বেশি প্রস্তুত। তারা আরো বলছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে নামলে যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই হেরে যাবে।
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে ইস্যুটি হ্যান্ডেল করে ইতিবাচক ফলাবর্তন পেয়েছে ইরান। আর ইরান-যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু হলে তার আঁচ লাগবে মধ্যপ্রাচ্যেও। যার ফলে অনেক দুর্গই তছনছ হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সে কারণে যুদ্ধ যেমন তারা চাইবে না, সমীকরণ মিলিয়ে দেখলে চোখে পড়বে সে যুদ্ধে ইরানের সঙ্গে অন্যরা পেরেও উঠবে না।