স্বাস্থ্য

ব্যাঙের ত্বকে ৫ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা

আইসিডিডিআরবির প্রাক্তন বিজ্ঞানী ডেভিড বি সাকার আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স এর ‘গোল্ডেন গুজ ২০১৯’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুদানে মানুষের জীবনে ও সামাজিক প্রয়োজনে সম্পাদিত যুগান্তকারী বিজ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতি সাধনে মৌলিক গবেষণাসমূহকে প্রতিবছর এই পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য বিবেচনা করা হয়।

অধ্যাপক সাকার এই পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকায় সম্পাদিত তাঁর পঞ্চাশ বছরেরও পুরোনো মৌলিক গবেষণা ‘ব্যাঙের ত্বক যা ৫ কোটিরও অধিক জীবন রক্ষা করেছে’-এর জন্য। তাঁর এই গবেষণাই পরবর্তীতে ড. ডেভিড নেলিন এবং ড. রিচার্ড এ ক্যাশ-এর খাবার স্যালাইন (ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি) আবিষ্কারকে সম্ভবপর করে।

ষাটের দশকে, সদ্য হার্ভার্ড থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসাবিদ ও আন্ত্রিক (ইন্টেস্টাইন) মেকানিজম গবেষক ডেভিড সাকার পূর্ব পাকিস্তানের কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি (বর্তমানে আইসিডিডিআর,বি)-তে যোগদান করেন। যেটি আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ এবং সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)-এর সহায়তায় পরিচালিত হতো। অধ্যাপক সাকার বলেন, ‘আমি দেশের সেবা ও একই সাথে বিশ্ববাসীকে সেবা দানে, এবং জনস্বাস্থ্য সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে উদগ্রীব ছিলাম।’

১৯৬৬ সালে অধ্যাপক সাকার কোপেনহেগেনে প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে অধ্যাপক হ্যান্স আসিংসের গবেষণাগারে ব্যাঙের ত্বকে ইলেকট্রিক পটেনশিয়াল নির্ণয় করার উপায় বের করেন, যেটি পরবর্তীতে মানুষের অন্ত্রে ইলেকট্রিক পটেনশিয়াল নির্ণয় করার একটি সহজ সমাধান বের করতে সহায়তা করে।

তিনি কলেরায় আক্রান্ত মানুষের অন্ত্রে সোডিয়াম পরিবহনের কার্যক্রম পরীক্ষায় এটি ব্যবহার করেন।

প্রফেসর সাকার দেখিয়েছিলেন যে, তৎকালীন ধারণকৃত কলেরার কারণে সোডিয়াম পাম্প অকার্যকর হয়ে পড়ার তত্ত্ব ভুল, আক্রান্ত থাকা সময়টুকুতেও অন্ত্রের সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা ঠিক থাকে, শুধু তাই নয় ইন্টেস্টাইনের লুমেনে গ্লুকোজ পৌঁছানো গেলে সোডিয়াম শোষণের মাত্রাকে প্রবলভাবে উদ্দীপ্ত করা যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় অধ্যাপক সাকারের সিনিয়র সহকর্মী নবার্ট হারস্বর্ণ একটি যুগান্তকারী ক্লিনিক্যাল গবেষণা করেন। তিনি দেখান যে গ্লুকোজ এবং ইলেক্ট্রোলাইটিস এর মিশ্রণ প্রয়োগের মাধ্যমে কলেরা রোগীর প্রচলিত চিকিৎসা শিরায় স্যালাইনের ব্যবহার কমানো যায় এবং এর ব্যবহার না করেও চিকিৎসা প্রদান সম্ভব। এর দুই বছরের মাথায় ড. ডেভিড নেলিন এবং ড. রিচার্ড এ ক্যাশ চিনি ও ইলেক্ট্রোলাইটিস ভিত্তিক খাবার স্যালাইনের আবিষ্কার করেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সহজলভ্যতা ও সুলভ মূল্যের কারণে গত পাঁচ দশকে খাবার স্যালাইন ৫ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জন ডি ক্লিমেন্স, অধ্যাপক সাকারের বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এই আবিষ্কার প্রসঙ্গে বলেন, ‘খাবার স্যালাইনের আবিষ্কারের পেছনে অধ্যাপক ডেভিড সাকারের গবেষণা অনবদ্য অবদান রেখেছে। যদিও ৫৩ বছর পরে এই গবেষণার স্বীকৃতি এসেছে তবুও আইসিডিডিআরবির সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হল।’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button