জাতীয়

দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে বিকাশে টাকা দাবি করছে প্রতারকচক্র

প্রতারকরা দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের টেলিফোন করে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ আছে। এসব অভিযোগ থেকে বাঁচতে হলে তাদের বিকাশের মাধ্যমে অর্থ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে এ জাতীয় প্রতারণার বিষয়গুলো অবহিত করেন। এসময় দুদক চেয়ারম্যান কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় দেওয়া প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া নিদের্শ দেন।

দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানকে জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম কিংবা তাদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দিয়ে এক বা একাধিক প্রতারকচক্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যক্তিদেরকে মোবাইল বা টেলিফোনের মাধ্যমে ফোন করে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অনৈতিক অর্থ দাবি করছে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অঅরও জানান, “করোনার এই মহা দুর্যোগকালেও একাধিক প্রতারকচক্র সক্রিয় রয়েছে।” দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিক সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি তাদেরকে (দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের) জানিয়েছেন, ‌“এসব প্রতারক তাদেরকে (সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি) দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে টেলিফোন করেছেন এবং বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে হলে তাদেরকে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ দিতে হবে।”

এ বিষয়গুলো অবহিত হয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‍“দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা কমিশনের ঊর্ধ্বতনকর্তৃক্ষ কিংবা তাদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এজাতীয়  প্রতারক/ প্রতারকচক্র সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। কমিশন থেকে বারবার আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কখনও কমিশনের নিজস্ব গোয়েন্দাদের মাধ্যমে প্রতারকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আবার কখনও পুলিশ বা র‌্যাবের সহায়তায় প্রতারকদের গ্রেফতার করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেশকিছু মামলা বিচারাধীন এবং তদন্তাধীন রয়েছে। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সর্বসাধারণকে অনুধাবন করতে হবে, কমিশনের বিবেচনাধীন কোনো অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্তের বিষয়ে দুদক কর্মকর্তাদের টেলিফোন করার কোনো সুযোগ নেই, যা প্রশাসনিক নির্দেশনার মাধ্যমে অনেক আগ থেকেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া যেসব প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে আইনি হেফাজতে নিয়ে জ্ঞিাসাবাদসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে, এসব ঘটনায় দুদকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পৃক্ত নয়।

দুদকের বিবেচনাধীন বা অনুসন্ধানাধীন বা তদন্তাধীন কোনো অভিযোগ হতে কমিশনের কোনো কর্মকর্তার একক অভিপ্রায় অনুসারে অব্যাহতি প্রদান কিংবা অভিযুক্ত করারও কোনো সুযোগ নেই। কমিশনের অনুসন্ধান বা তদন্ত এমন একটি প্রক্রিয়া, যা তদন্তকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কমিশনের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সম্পৃক্ত। কমিশন আইন-অনুযায়ী কমিশনের সকল সিদ্ধান্ত কমিশন কর্তৃক গ্রহণ করা হয়ে থাকে । তাই এ জাতীয় প্রতারকদের টেলিফোনে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। এদের সাথে  কোনরূপ অনৈতিক আর্থিক লেনদেনে কেউ জড়াবেন না।

এ জাতীয় প্রতারকদের অনৈতিক অর্থ প্রদান দুর্নীতির শামিল। তাই এসব প্রতারকদের আইন আমলে নিয়ে আসার জন্য নিকটস্থ থানা অথবা র‌্যাব কার্যালয় বা দুদকের স্থানীয় সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে অভিযোগ জানান। প্রয়োজনে দুদকের পরিচালক (গোয়েন্দা) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী (মোবাইল নং ০১৭১১-৬৪৪৬৭৫) অথবা দুদক পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্যকে (মোবাইল নং ০১৭১৬-৪৬৩২৭৬) অভিযোগ জানাবেন। এসব  প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কমিশন এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button