জাতীয়

পদ্মা সেতুর বাকি শুধু পিচ ঢালাই

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জন্য ছিল একটি বিশেষ মুহূর্ত গত বছরের ১০ ডিসেম্বর। সেদিন ৪১তম স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে পদ্মার দুই কূলের মিলন ঘটেছিল। ঠিক একই রকম আরেক বিশেষ মুহূর্ত দেখা গেল গতকাল সোমবার।
এ দিন সর্বশেষ স্ল্যাবটি বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সড়কপথটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো। ফলে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার আরও কাছে চলে এসেছে। এখন বাকি কেবল কার্পেটিং, সাইড রেলিং বসানোসহ টুকিটাকি কাজ- তা হলেই গাড়ি চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হয়ে যাবে পদ্মা সেতু।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারে সর্বশেষ রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ শেষ হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর মাঝখান দিয়ে গ্যাসলাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে শেষ হতে চলেছে রেললাইনের কাজও। আগামী বছরের জুনের আগেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ করা হবে। এ জন্য এ প্রকল্পে কর্মরত সবাই একযোগে দিনরাত কাজ করে চলছেন।
তিনি আরও জানান, সেতুর মোট ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্লাবের মধ্যে সর্বশেষটি সোমবার সকালে বসানো হয়। এর আগে চলতি বছরের ২০ জুন শেষ হয়েছিল দ্বিতল সেতুর রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ। ২ হাজার ৯৫৯টি রেল স্লাবের সবই বসানো সম্পন্ন হয়েছে। ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুতে ৫ হাজার ৮৩৪টি শেয়ার পকেটের মধ্যে ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে ২ হাজার ২১২টি। মূল সেতু ও ভায়াডাক্ট মিলে রোডওয়েতে মোট ১২ হাজার ৩৯০টি প্যারাপেট ওয়াল বা রেলিং বসানো হবে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮২০টি বসানো হয়েছে। রোডওয়েতে পানি নিরোধক একটি স্তর (ওয়াটার প্রুফ মেমব্রেন) বসানো হবে।
সোমবার পর্যন্ত সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ মূল সেতুর কাজের আর বাকি মাত্র ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর সার্বিক কাজ সম্পর্কে পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, ধীরে ধীরে আমরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সেতুর বড় কাজগুলোর প্রায় সবই শেষ হয়েছে। সব পিলার বসানো, স্প্যান বসানো, রোড স্ল্যাব বসানো শেষ হয়ে গেছে। সেতুর দুপাশের রেলিং বসানোর কাজও প্রায় ৫০ ভাগ শেষ হয়ে গেছে। বাকি কাজের মধ্যে বড় যে অংশটি রয়েছে সেটি হচ্ছে- কার্পেটিং। বর্ষাকাল শেষ হলে আমরা আগামী অক্টোবর থেকে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করব। ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা আশা করছি পদ্মা সেতু গাড়ি চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। তবে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে এবং আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের বলেন, সেতুর ওপরের রাস্তার কার্পেটিং বা পিচ ঢালাই আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করিনি। তবে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ মিটার রাস্তার পিচ ঢালাই করা হয়েছে। বর্ষা শেষ হলে আগামী অক্টোবর নাগাদ শুরু হবে আনুষ্ঠানিকভাবে রাস্তার পিচ ঢালাই। যে ৬০ মিটার রাস্তায় পিচ ঢালাই দেওয়া হয়েছে সে অংশটুকুও চূড়ান্ত ঢালাই হিসেবেই দেওয়া হয়েছে। আমরা আসলে দেখতে চাচ্ছি ঢালাই কেমন হবে বা কোনো সমস্যা দেখা দেয় কি না। অবশ্য এই পরীক্ষামূলক ঢালাইয়ের আগে সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে (ব্যয়) ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ। মূল সেতুর কাজের চুক্তি মূল্য প্রায় ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হতে থাকে পদ্মা সেতু। ৪২টি পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান একে একে বসানো হয়। সর্বশেষ স্প্যানটি বসানো হয় গত বছরের (২০২০) ১০ ডিসেম্বর। এতে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা রয়েছে। দোতলা এই সেতুর ওপর দিয়ে চলবে সাধারণ যানবাহন আর নিচ দিয়ে ট্রেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে সরাসরি সড়কপথে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত করছে এ সেতু।
কার্পেটিং শুরু অক্টোবরে : ওবায়দুল কাদের
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সড়কপথের কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হবে অক্টোবরে। সোমবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তার আগেই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য টোলের হার চূড়ান্ত করা হবে। টোলের হার প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হবে।
সেতু চালুর পরই এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়
এদিকে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করা শুরু হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের টোল গত জুলাই মাস থেকেই আদায় শুরু করবে। কিন্তু এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় করা শুরু হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button