বরিশাল বিভাগসারাদেশ

দীর্ঘ ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে সাগরে জেলেরা

কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি:  টানা ৬৫ দিনের মৎস্য অবরোধ শেষে এখন মাছ শিকারের জন্য সাগরে যাচ্ছে জেলেরা । তবে     করোনা ভাইরাস আর ৬৫ দিনের মৎস‍্য অবরোধের কারণে বহু কষ্টে জীবনযাপন করছেন উপকূলীয়  এই জনপদের জেলেরা। দীর্ঘদিন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ায় প্রস্তুতি আগেভাগেই সম্পন্ন করে রেখেছিল। কেউ ইতোমধ্যে সাগরের উদ্দেশ্যে  রওনা হয়েছেন। তাই এখন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার জেলে পল্লী গুলোতে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ। আর উপজেলার আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটার মৎস্য আড়ত গুলোর কর্মচাঞ্চল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ঝিমিয়ে পড়া জেলে পল্লী ও মৎস্য আড়ৎ গুলো যেন প্রান ফিরে পেয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা ফিসিং ট্রলার মাঝি সমিতির সাবেক সভাপতি নুরু মাঝি জানান, গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার ছাড়া আর কোন পেশায় তার অভিজ্ঞতা নেই। এ অবরোধকালীন সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করতে হয়েছে। এতোদিন শুধু অপেক্ষায় থেকেছেন কখন ইলিশ শিকারের মাধ্যমে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন।  সরকারী বিধি নিষেধ মেনেই এতোদিন সমুদ্রে মাছ শিকারে যাননি। কিন্তু কষ্ট হয় তখন, যখন ভারতীয় জেলেরা এ অবরোধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে প্রচুর ইলিশ শিকার করে নিয়ে যায়।  অবরোধকালীন সময়ে জেলে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, অবরোধের এই ৬৫ দিনে জেলেরা কেউ পুরানো জাল মেরামোত করছেন। কেউ নতুন জাল প্রস্তুত করছেন। আবার কেউ পুরানো নৌকা, ট্রলার মেরামত করছেন। কেউ তৈরি করছেন নতুন ট্রলার।  ট্রলার মালিক, জেলে এবং অড়ৎদারদের মহাব্যস্ততা ছিলো লক্ষ্য করার মতো। ট্রলার মালিক, আড়ৎদার, জেলে সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় অর্ধশতাধিক ট্রলার নির্মান করেছেন মৎস্যজীবিরা। গত বছর মৎস্য ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা নতুন ট্রলার বানাচ্ছেন মাছ শিকারের জন্য। তাছাড়া এ বছর অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা বাড়িয়েছে। আবার অনেকেই নতুন ভাবে ব্যবসা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নতুন ট্রলার ঘাটে নোঙ্গর করা শুরু হয়েছে। চলতি ইলিশ মৌসুমে এসব ট্রলার মাছ শিকারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
কুয়াকাটা আশার আলো মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি মো: নিজাম শেখ বলেন, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে ভবিষ্যতে সমুদ্রে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ জেলেদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ রইলো। ইলিশ মৌসুমে গভীর সাগরে জেলেদের উপরে জলদস্যুদের হামলার কথা উল্লেখ করে
গঙ্গামতির জেলে জামাল হোসেন জানান, পূর্ব পুরুষদের মাছের ব্যবসা আকড়ে ধরে তিনি এ পেশায় আছেন। ধারদেনা এবং ঋণ করে এবার নিজেই ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ট্রলার নির্মাণ করেছেন। কোনভাবে জলদস্যুদের কবলে পড়লে তিনি নি:স্ব হয়ে যাবেন।
কুয়াকাটা-আলীপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি মো: আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, মৌসুমের শুরুতে অবরোধের ফলে দক্ষিণের সবচাইতে বড় মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটার মাছের আড়ৎগুলো এতদিন নিস্প্রাণ ছিল। বেকার, অলস, মানবেতর সময় পার করেছে মৎস্য শ্রমিকরা। এখন আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে মৎস্য বন্দর। আশা করা যায় এবছর সাগরে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। তাই জেলেদের নিরাপদ মৎস্য শিকার নিশ্চিত করতে র‍্যাবের সমন্বয়ে যৌথবাহিনী জলদস্যু দমনে যে কাজ করছে তা অব্যাহত রাখার দাবী জানান।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নির্দেশক্রমে ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হবে ২৩ জুলাই। আশা করা যায় এবার জেলেদের জালে প্রচুর বড় বড় ইলিশ ধরা পড়বে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button