জাতীয়

যানজটে বিপর্যস্ত ঢাকার জীবন

সড়কে আটকে আছে গাড়ির সারি। অফিসের কাছাকাছি এসে যানজটের জ্বালা আর সইতে পারছেন না বাদল রহমান। বাধ্য হয়েই মালিবাগে বাস থেকে নেমে যান তিনি। বাস থেকে নেমেই শরবতের দোকান খুঁজতে থাকেন বাদল।

গরমে যানজটে বাসে বসে পরনের শার্ট প্রায় ভিজেই গেছে তাঁর।

 

মালিবাগের মূল সড়কের পাশের গলিতে এক শরবতের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় বাদল রহমানের সঙ্গে। বিরক্তিভরা চেহারায় তিনি বলেন, ‘জেলা শহরে যদি চাকরি থাকত তাহলে আর ঢাকায়ই থাকতাম না। এই শহরে মানুষের থাকার কোনো উপায় আছে? কাকরাইল থেকে এতটুকু পথ আসতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লেগে গেল। ’

ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বাসে সিট পাই নাই। গরমে ঘেমে বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে গেছি। বংশাল থেকে বাসে উঠেছি উত্তরা যাব। বংশাল থেকে আসতেই এক ঘণ্টা লাগছে। বাস যেন চলেই না। এখন সিএনজিতে (অটোরিকশা) যাব ঠিক করছি। ’

বাদল-রফিকুলের মতো ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে লাখো মানুষ। তাদের ভোগান্তির মাত্রা বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে গরম। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সড়কের খানাখন্দ, নির্মাণকাজের জন্য রাস্তা ছোট হয়ে আসা, করোনা-পরবর্তী সময়ে সব প্রতিষ্ঠান খুলে যাওয়া এবং সড়কে অতিরিক্ত ছোট যান বেড়ে যাওয়া যানজটের অন্যতম কারণ।

গতকাল রবিবার সরেজমিনে গিয়ে ঢাকার আজিমপুর, মিরপুর, ফার্মগেট, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, রামপুরা, মগবাজার, বংশাল, শান্তিনগর, বিমানবন্দর, মহাখালীসহ বেশ কিছু এলাকার প্রধান সড়কে যানজটের প্রায় একই চিত্র দেখা যায়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রোকন ভুঁইয়া। থাকেন লালবাগ এলাকায়। অফিসের কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই তাঁকে মিরপুর যেতে হয়। রোকনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আজিমপুর থেকে বাসে উঠলে আগে সোয়া ঘণ্টার মধ্যেই অফিস পৌঁছা যেত। এখন এই সময়ের কোনো ঠিক-ঠিকানা নাই। ’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন অফিসে যাওয়ার সময় সকালে দ্রুত বের হয়ে যাই। এতে আগারগাঁও পর্যন্ত ফাঁকা পাওয়া যায়। কিন্তু অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় মনে হয় অভিশাপ নেমে আসে। চার-পাঁচ দিন আগে তো বিকেল সাড়ে ৪টায় মিরপুর থেকে বাসে উঠে রাত ৯টায় আজিমপুর নেমেছি। ’  দ্বিগুণ সময়েও গন্তব্যে পৌঁছা যাচ্ছে না বলে জানালেন রুমান আহমেদ। বাড্ডায় থাকেন তিনি।

যানজট বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘যানজট নিয়ে নতুন করে বলার আর কিছুই নাই। কেন যানজট হয়—এটা আমরা সবাই জানি। সড়কে শৃঙ্খলা না ফিরলে যানজটের সমাধান হবে না। তার ওপর এখন করোনা-পরবর্তী সব অফিস খুলে গেছে। এতে যানজটের মাত্রা আরো তীব্র হয়েছে। ’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button