রংপুর বিভাগসারাদেশ

ভুরুঙ্গামারীতে এলজিএসপির টাকা লোপাট

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভুরুঙ্গামারী ও পাইকেরছড়া ইউনিয়নে এলজিএসপি প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
কুড়িগ্রাম ফ্যাসিলিটেটরের তত্ত্বাবধান ও অবগতির পরে গত ১২নভেম্বর ২০১৮খ্রিঃ ভুরুঙ্গামারী উপজেলা হররুমে এলজিএসপি-৩ বিজিসিসি কমিটিবৃন্দ এবং বিজিসিসি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন ও কাজ বাস্তবায়ন শুরু হয়।

সূত্র মতে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভুরুঙ্গামারী ও পাইকেরছড়া ইউনিয়নে লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রকল্প (এলজিএসপি-৩) আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নে বিবিজি প্রকল্প ৬টিতে ১২লাখ ৮৫হাজার এবং পাইকেরছড়া ইউনিয়নে বিবিজি ও পিবিজি প্রকল্প ১২টিতে ২১লাখ ৯০হাজার ৭১২টাকার বরাদ্দ সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বলে নিয়ম থাকলেও তা অনিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ। জনগুরুত্বহীন প্রকল্পে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নামমাত্র কাজ করে কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখায়ে ফায়দা লুটিয়ে নেয়ার পায়তারা করে আসছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন করণে এলজিএসপি-৩ প্রজেক্ট অর্থবছর ২০১৭-১৮ খ্রি.চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নে বিবিজি প্রকল্প ৬টিতে ১২লাখ ৮৫হাজার এবং পাইকেরছড়া ইউনিয়নে বিবিজি ও পিবিজি প্রকল্প ১২টিতে ২১লাখ ৯০হাজার ৭১২টাকার কাজ স্ব-স্ব প্রকল্প সভাপতি নামমাত্র কাজ করে কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখায়ে নিজের ফায়দা লুটিয়ে নেয়ার পায়তারা করে আসছে।

অনুসন্ধানে, এলজিএসপি-৩ প্রজেক্টের অর্থায়নে চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আঃ মজিদের বাড়ি সংলগ্ন কালভার্ট নির্মাণ বরাদ্দ ২লাখ ১৫হাজার টাকা। মাত্র ৯০হাজার টাকায় কালভার্ট নির্মাণ শেষ। ৩নং ওয়ার্ডের খেয়াঘাট হতে নতুনহাটগামী রাস্তা রহমত দোকানদারের বাড়ির উত্তর পাশে ব্রিজ নির্মাণ ৪লাখ ৯০হাজার টাকা। মাত্র ৩লাখ টাকায় ব্রিজ কাজ শেষ। ৪নং ওয়ার্ডের চর ভুরুঙ্গামারী আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ল্যাটিন ও বাথরুম নির্মাণ ৩লাখ টাকা। সেখানে মাত্র ১লাখ ৫০হাজার টাকায় কাজ শেষ করেন স্ব-স্ব প্রকল্প সভাপতি। এলজিএসপি ইউনিয়ন সভাপতি ও চেয়ারম্যান এ টি এম ফজলুল হক ও ইউপি সদস্যরা অর্থ ভাগবাটোয়ারা করছেন বলে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানায়।

পাইকেরছড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ওয়ালডার্স ক্লাব মাঠের দক্ষিণ পশ্চিমে পোস্ট অফিস ঘর নির্মাণ ২লাখ ৪০হাজার। মাত্র ১লাখ ৫০হাজার টাকায় ঘর কাজ শেষ। ৭নং ওয়ার্ডের হেলিপ্যাডের উত্তর পাশ্বে রাস্তার দু’দিকে গ্রেট ওয়াল ও ড্রেন নির্মাণ ৩লাখ ৯০হাজার। নামমাত্র গ্রেট ওয়াল ও ড্রেন নির্মাণ করায় গ্রেট ওয়ালের প্রথম কণারে একাংশে ওয়ালের নিচ ভেঙে গেছে এবং যে কোন মুহূর্তে সম্পূর্ণ গ্রেট ওয়াল ভেঙে পড়বে। ৮নং ওয়ার্ডের ডিপেরহাট দাখিল মাদ্রাসার ঘর নির্মাণ ৪লাখ ৫০হাজার। সেখানে ঘর করে মাত্র ২লাখ টাকায়। এলজিএসপি ইউনিয়ন সভাপতি ও চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকার ও ইউপি সদস্যরা প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে ফায়দা লুটিয়ে নিচ্ছেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানায়।

এলাকাবাসী জানান, চেয়ারম্যান নির্বাচনের সময় দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল ইউনিয়ন গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও বাস্তবে দেখা গেছে এর উল্টো চিত্র। মূলত ছত্রছায়ায় এলজিএসপি প্রকল্পের সভাপতি নাম দেখানো কাজ করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছে।

প্রকল্প সভাপতি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, যেহেতু প্রকল্প নিতে চেয়ারম্যানদের পিছি দিয়ে নেয়া হয়েছে। কাজতো একটু খারাপ হবে।

চর ভুরুঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান এ টি এম ফজলুল হক বলেন, আমি এলজিএসপির কাজ স্টিমেট মতো করছি।

পাইকেরছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরুজুল ইসলাম বলেন, বিষয়গুলো আমার অবগত নয়। তথ্য প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম এলজিএসপির ডি এফ ফারুক আহমেদ বলেন, চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের কাজে অনিয়ম পাওয়ায় প্রকল্পের বিল বন্ধ করা হয়েছে। চর ভুরুঙ্গামারী ও পাইকেরছড়া ইউনিয়নের প্রকল্পসমূহ তদন্ত করে উধ্বতর্ন কৃতপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button