লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরের ২০ কৌশল

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দুই মাস শেষ না হতেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাইরের চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাইরের চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে কোভিড মহামারির কারণে বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা ছাড়াও পণ্যমূল্য কমে যাওয়া, আবার বৃদ্ধি পাওয়া ও আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা।
অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত ডিজিটালাইজেশন, মানবসম্পদের সীমাবদ্ধতা, সঠিক কর নির্ধারণ, আমদানি ও খালাস কার্যক্রমে অভাব, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, পরিদর্শনের অভাব, বিভিন্ন সরকারি দফতরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া উল্লেখযোগ্য। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ও বাইরের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০টি কৌশল নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত রাজস্ব আদায় মনিটরিং করা, উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সঠিকভাবে কর কর্তন ও জমাদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ ছাড়াও বকেয়া আদায় আহরণ নিশ্চিত করা, এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করা, নতুন করদাতা বাড়ানো, সহযোগী দফতরের সঙ্গে কর ফাঁকি উদঘাটন করা। এ ছাড়াও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পার্টনারশিপ সংলাপ অব্যাহত রাখা।
ঘরে-বাইরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে এনবিআর ইতোমধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, স্মরণকালের রেকর্ড ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে। গত ১০ বছরে রাজস্ব আহরণ ৪ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য অনুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে তা দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ০৬ শতাংশ। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। সঙ্কুচিত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। সারা বিশে^র মতো বাংলাদেশেও ছোটবড় সব ব্যবসা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে সরকারের নেওয়া সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এনবিআর সব ধরনের ব্যবসায়ীকে প্রণোদনা, কর, ভ্যাট ছাড় কিংবা অব্যাহতি দিয়েছে। আর তা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই কার্যক্রম হাতে নেয়। করোনাকালে বাজেটে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে একদিকে যেমন কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে বহির্বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করতে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব খাতে। তবে করোনা পরিস্থিতিতেও এনবিআর সবার সহযোগিতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি রাজস্ব সংগ্রহ করেছে।
জানা গেছে, বিগত অর্থবছরে ভ্যাটের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু খাতে ৫০ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে কাস্টম ক্ষেত্রেও ৩৯ হাজার কোটি টাকা আমদানি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর আয়করের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার কোটি টাকা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। করোনা অতিমারির মধ্যে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে যেসব উদ্যোগ নিয়ামকের ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়াও বাজেটে কয়েকটি নীতিগত পরিবর্তনের ফলে দুই বৃহৎ করদাতা ইউনিট প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করেছে। শুধু তাই নয়, এটা ম্যাজিক হিসেবে কাজ করেছে ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার থেকে শুরু করে আধুনিকায়ন ও আগামী দিনের পরিকল্পনার হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- অটোমেশন, কর দেওয়া সহজ করা, কর আহরণের দক্ষতা বৃদ্ধি, করজাল বাড়ানো, সঠিকভাবে কর নিরূপণ করে মামলা নিষ্পত্তি করা, আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা, অডিটভীতি দূর করে নেট ও রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়ানো, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট তদারকি জোরদার করা, ই-চালানের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করা, নতুন কাস্টমস আইন বাস্তবায়ন, নতুন ‘ডাইরেক্ট ট্যাক্স কোড’ তৈরি করা, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, ট্রান্সফার প্রাইসিং ও এন্টি মানি লন্ডারিং কার্যক্রম সক্রিয় করা।