লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাতের ময়দান

সৌদি আরবে হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী আজ ৯ জিলহজ। হাজিদের ‘উকুফে আরাফা’ বা আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলনের দিন। কিন্তু করোনার কারণে সৌদি আরবে অবস্থানকারী মাত্র ৬০ হাজার মানুষ এবার হজ পালন করছেন। তাদের মতো সৌভাগ্যবানদের কণ্ঠে সেখানে উচ্চারিত হচ্ছে ‘লাব্বাইক আলস্নাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারিকালাকা লাব্বাইক’ ধ্বনি। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমতপ্রাপ্তি ও নিজের গুনাহ মাফের জন্য আলস্নাহ তায়ালার কাছে অশ্রম্নসিক্ত ফরিয়াদ জানাবেন সমবেত মুসলমানরা। হাজী ও বিশ্বমুসলিমের জন্য প্রদান করা হবে খুতবা। আজ জোহরের নামাজের ওয়াক্তের আগেই হাজিরা সমবেত হবেন মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। ১৪০০ বছর আগে এই ময়দানেই রাসূল (সা:) লক্ষাধিক সাহাবিকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ময়দানেই ইসলামের পরিপূর্ণতার ঘোষণা দিয়ে কুরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল। আরাফাতের ময়দান হেরেম এলাকার বাইরে কাবা শরিফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই ময়দান প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত। ৮ জিলহজ থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে হজের আরও অনেক করণীয় থাকলেও আজ ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। হজের কার্যাদি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন শুরু হয়েছে রোববার। ৮ জিলহজ মিনার তাঁবুতে অবস্থানের মধ্য দিয়ে। মিনায় হাজীদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। পুরুষ ও মহিলাদের থাকার জন্য আলাদা তাঁবু রাখা হয়েছে। আজ ফজরের নামাজ ও সূর্যোদয়ের পর থেকে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে হাজিদের রওনা হওয়ার নিয়ম। সেখানে গিয়ে অস্থায়ী তাঁবুতে অবস্থান করবেন। সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্তত্ম আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ। কেউ এই সময়ের মধ্যে এই ময়দানে অবস্থান করতে না পারলে হজ আদায় হবে না। এই ময়দানে জোহরের সময়ের পর জোহর ও আসরের নামাজ জামাতে আদায় করবেন হাজিরা। মুসাফির হওয়ার কারণে নামাজ কসর করবেন (চার রাকাতের স্থলে দুই রাকাত)। নামাজের আগেই মসজিদে নামিরাহ থেকে খুতবা দেবেন নির্ধারিত খতিব। এর আগে পরে হজযাত্রীদের কণ্ঠে উচ্চারিত ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে পুরোময়দান। সবার পরনে একই ধরনের সেলাইবিহীন কাপড়, আলস্নাহর শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা, আলস্নাহর কাছে আত্মসমর্পণ এবং তারই কাছে গুনাহ মাফ ও রহমত প্রাপ্তির আকুতি। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই আবার মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফা নামক স্থানে রাতে অবস্থান নেবেন হাজীরা। ওই স্থানে রাতে অবস্থান করবেন খোলা আকাশের নিচে। সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ এক সঙ্গে আদায় করবেন। মিনায় জামারাতে শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের জন্য এখান থেকেই কঙ্কর সংগ্রহ করবেন তারা। রাতে সেখানে অবস্থানের পর কাল ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ শেষে সূর্যাস্তের আগেই মিনার দিকে রওনা হবেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা একজন হাজির জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। এই অবস্থান হজের অন্যতম ফরজ।