জাতীয়

সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার অসম্পূর্ণ: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

 

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট যারা সৃষ্টি করেছিলেন, যারা দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে হত্যাকাণ্ডের ভূমিকা রেখেছিলেন, ওই সময় দায়িত্ব পালন যাদের অনিবার্য ছিল; অথচ করেননি। এ জাতীয় ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা অনিবার্য ছিল। কিন্তু তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে করা হয়নি।
দেশের প্রচলিত ফৌজদারি বিচার সংক্রান্ত আইনে তারা দ-যোগ্য অপরাধ করেছিল। কিন্তু বিচারের মুখোমুখি না করায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, তার প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী সুবিধাভোগী সংশ্লিষ্টদের স্বরূপ উন্মোচন ও আইনের আওতায় আনার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩ এর ৩ (খ) ধারা অনুসারে আরও তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের সুযোগ রয়েছে।
এ ছাড়াও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রাপ্ত রিপোর্ট শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে। ইতিহাসের এই বর্বরোচিত ঘটনার মাস্টারমাইন্ডসহ সবার ভূমিকা গোটা জাতির কাছে স্পষ্ট করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধুকন্যার আমলে এটা করা না হলে ইতিহাসের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে যাবে।
তদন্তে প্রাপ্ত আত্মস্বীকৃত খুনিদের জবানবন্দি, বিভিন্ন সময়ে দেওয়া তাদের সাক্ষাৎকার, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ডকুমেন্টস থেকে জোরালোভাবে প্রতিভাত হয়েছে যে, জেনারেল জিয়া ষড়যন্ত্রে জড়িত এবং তিনি কর্নেল ফারুক ও রশীদকে এ ঘটনা সংগঠনে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে তার অবশ্যই অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে উল্লিখিত থাকাটাই সঙ্গত ছিল। মৃত্যুর কারণে তার বিচার করা যাবে না; কিন্তু তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে চার্জশিটে উল্লেখ করতে কোনো আইনগত বাধা ছিল না।
জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ‘গো অ্যাহেড’ বলে প্রমাণ করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের শুধু ষড়যন্ত্রকারীই নন, হুকুমদাতা। এ জন্য বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা নিয়ে নতুন করে একটি সম্পূরক তদন্ত করে সে রিপোর্ট রেকর্ডে রাখা উচিত। এ বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। যে তদন্ত কমিশন বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ষড়যন্ত্রে কারা কারা জড়িত ছিল তাদের নাম প্রকাশ করবে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের প্লট যারা রচনা করেছিল, তারা নিঃশেষ হয়ে যায়নি। তারা এদেশ থেকে এখনও বিনাশ হয়ে যায়নি। কখনও ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে কখনও তারা স্বাধীন ফোরাম করে এ দেশে থাকে। পঁচাত্তরের শত্রু যারা, তারা একাত্তরের শত্রু, তারা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী এবং তারাই ১৯ বার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আমরা সে মানুষগুলোকে এখনও আইনের আওতায় আনতে পারিনি।
লেখক : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য : পিরোজপুর-১; সাবেক সম্পাদক, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button