সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই বিমানের টরন্টো ফ্লাইট উদ্বোধন নিয়ে প্রশ্ন
বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই কানাডার টরন্টোতে প্রথম সরাসরি ফ্লাইট চালিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। উদ্বোধনী ফ্লাইটের পর বিমান কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, এই গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব নয়। মাঝে একটা বিরতি নিতে হবে। তবে সেটি ট্রানজিট হবে না কি স্টপ ওভার হবে, হলে কোথায় হবে তা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
প্রস্তুতি না নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনাকে রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহন সংস্থার চরম অপেশাদারত্ব হিসেবে দেখছেন বিমান পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, টরন্টো ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বিমানের যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না। এর আগে নতুন কোনো গন্তব্যে বিমানের ফ্লাইট শুরুর সময় এমন অবস্থা দেখা যায়নি। এভাবে কেন ফ্লাইট চালু করা হলো, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।
নতুন কোনো গন্তব্যে ফ্লাইট শুরুর আগে সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করতে হয়। নতুন গন্তব্যে দূরত্ব অনুযায়ী যাত্রীর চাপ কেমন হবে, কী ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহার হবে, কোথাও বিরতি, ট্রানজিট নেওয়া হবে কি না, জ্বালানি কতটুকু লাগবে—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে যাচাই করতে হয়। যাচাই শেষে পরিকল্পনা করে ফ্লাইট উদ্বোধন চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু কানাডার টরন্টো গন্তব্যের ক্ষেত্রে এগুলোর কোনোটিই করা হয়নি।
গত ২৬ মার্চ টরন্টো ফ্লাইটের উদ্বোধন করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষামূলক এ ফ্লাইটে সরকারের ৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়। ২৯৮ আসনের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইটটি পরিচালিত হয়। ১৮ ঘণ্টা উড়ালের পর এটি টরন্টো পৌঁছায়। ওই ফ্লাইটে ৩৬ জন সরকারি কর্মকর্তা, দুজন সংসদ সদস্য টরন্টো যান। বিমান অবশ্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, ৭০ জন যাত্রী নিয়ে টরন্টোর উদ্দেশে বিমানের ফ্লাইট ঢাকা ছেড়েছে। ৩০ মার্চ সকালে টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট ছয়জন সাধারণ যাত্রীসহ বাকি যাত্রীদের নিয়ে দেশে ফেরে। এর আগে গত ২৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে বিমান কর্তৃপক্ষ একে ‘মর্যাদা রক্ষার’ ফ্লাইট হিসেবে বর্ণনা করে।
টরন্টো ফ্লাইটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘জুন থেকে নিয়মিত ফ্লাইট চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরাসরি ফ্লাইট চালালে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হবে না, এটা বলা হচ্ছে না। তবে টরন্টো যাওয়ার পথে যদি একটা অপশন রাখা যায়, ফুয়েল নেওয়া বা টেকনিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে, সেটা দেখা হচ্ছে। যাত্রীরা যদি সরাসরি ফ্লাইট চায়, এরপরও একটা অপশন হাতে রাখা। পরে এটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।’
এই ফ্লাইট চালুর আগে কেন সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি জানতে চাইলে সাজ্জাদুল হাসান বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল ও বিমানের মুখপাত্র তাহেরা খন্দকারের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করে ও খুদে বার্তা পাঠিয়ে জবাব পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘টরন্টো ফ্লাইট নিয়ে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করা হয়নি। অথচ বোর্ডের সিদ্ধান্ত ছিল, সম্ভাব্যতা যাচাই আগে করার। এটা না করেই ফ্লাইটটি উদ্বোধন করা হলো। প্রথমে বলা হলো, সরাসরি ফ্লাইট হবে। প্রথম ফ্লাইট সরাসরিই গেল। এখন বিমান বলছে, সরাসরি ফ্লাইট বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর হবে না। কোথাও বিরতি নিতে হবে। সেটা কখন, কোথায় হবে কেউ জানে না।’