আন্তর্জাতিক

করোনা চিকিৎসায় ফের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের অনুমোদন দিলো বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা

করোনা চিকিৎসায় আবারো ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়ালের অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও এর আগে এই সংস্থার পক্ষ থেকেই বলা হয়েছিল যে করোনা চিকিৎসার জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার নিরাপদ নয়। তবে এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তথ্য পর্যালোচনা করে আবারো হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এর আগে সার্জিস্ফিয়ার নামের এক মার্কিন কোম্পানির তথ্যের ভিত্তিতে করা বিশ্বসেরা দুই মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট ও নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন এ প্রকাশিত গবেষণার বরাতে হাইড্রোক্লোরোকুইনের ট্রায়াল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, সার্জিস্ফিয়ার নামের এই কোম্পানির তথ্য সংগ্রহ করার বৈজ্ঞানিক জনবল ও অবকাঠামোই নেই। মাত্র তিন জন কর্মীর এই প্রতিষ্ঠানের সায়েন্স এডিটর একজন সায়েন্স ফিকশন লেখক ও ফ্যান্টাসি আর্টিস্ট। মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ নামে যে নারীর নাম আছে তিনি একজন পর্নোস্টার। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক স্বপন দেসাইয়ের নামেও তিনটি অপচিকিৎসা বিষয়ক মামলা ছিল।
গত ২২ মে ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত সার্জিস্ফিয়ারের একটি গবেষণায় বলা হয়, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারকারী অনেক করোনা রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। সার্জিস্ফিয়ারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বের ১২০০ টি হাসপাতালের ৯৬ হাজার রোগী ওপর তারা ওই গবেষণা চালিয়েছে। আর এই গবেষণার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়াল বন্ধ করে দেয়। তবে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে ওই গবেষণার ত্রুটি ধরা পড়ে।
সার্জিস্ফিয়ারের গবেষণায় বলা হয়, ২১ এপ্রিল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় করোনায় ৭৩ জন মারা যান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় ২১ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় ৬৭ জন মারা যান। এর দুই দিন পর অর্থাৎ ২৩ এপ্রিলেও যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যে অস্ট্রেলিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৭৩ জনের কম দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণাটির সহকারী লেখক স্বপন দেসাই বলেন, “এশিয়ার একটি হাসপাতালের তথ্য ভুলে অস্ট্রেলিয়ার তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার করোনা রোগীদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে যে হাসপাতালগুলোতে যেতেই হবে এমন পাঁচটি হাসপাতাল জানিয়েছে, তারা সার্জিস্ফিয়ারের নামই কোনোদিন শোনেনি।”
এদিকে সার্জিস্ফিয়ারের গবেষণায় ত্রুটি ধরা পড়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ল্যানসেট ও নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল।
এই বিষয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, “গত সপ্তাহে ‘সলিডারিটি ট্রায়ালের নির্বাহী কর্মকর্তাদের দল সাময়িকভাবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়াল স্থগিত করতে বলেছিলেন। কারণ তখন ওষুধটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাই সতর্কতাবশত ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তবে সকল তথ্য পর্যালোচনা করে এটি ট্রায়ালের সিদ্ধান্ত আবারো নেয়া হয়েছে।”
করোনা ইস্যুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে বিরোধে চলছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। করোনা চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধকে কার্যকরী বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, করোনা থেকে বাঁচতে তিনি প্রতিনিয়ত এটি সেবন করেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়ে দিয়েছিল, করোনা চিকিৎসায় করোনা রোগের জন্য হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার নিরাপদ নয়।
এদিকে আবার করোনা ইস্যুতে চীনের পক্ষ নেয়ার অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে করোনা ইস্যুতে তারা তাদের কার্যকলাপ পুনর্বিবেচনা করে দেখবে।
করোনা প্রতিরোধে শুধু ম্যালেরিয়ার ওষুধ নিয়ে নয় এর আগে মাস্ক নিয়েও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিল নড়বড়ে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা। সংস্থাটির পক্ষ থেকে একবার জানানো হয়েছিল যে করোনা প্রতিরোধে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। পরে এ নিয়ে সুর পাল্টিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা আবারো জানায় যে অসুস্থ না হলে মাস্ক পরার দরকার নেই।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button