জাতীয়
১৬ বছর বয়সিদের এনআইডির তথ্য সংগ্রহ: বিকল্প ভাবছে ইসি
কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে ১৬ বছর বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আওতায় আনার বিষয়টি। কীভাবে এদের জাতীয় পরিচয়পত্রের আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে কমিশনে চলছে আলোচনা। করোনাকালীন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তাই বিকল্প ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, করোনাকালে আমরা চাচ্ছি যারা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী আছে তাদের তথ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করানো যায় কি না। এর বাইরে যারা থাকবে তাদের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে অ্যানাউসমেন্ট করা যায় কি না। এটি আগামী সপ্তাহের বৈঠকে আমরা চূড়ান্ত করব।
করোনার টিকাদান কর্মসূচি নির্বিঘ্ন রাখার অংশ হিসেবে ইসি নাগরিকদের এনআইডি দেওয়ার আওতা বাড়িয়েছে।
সরাসরির পাশাপাশি অনলাইন সেবার পরিধিও বাড়িয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যমান ১৮ বছরের স্থলে বয়স দুই বছর কমিয়ে ১৬ বছর বয়সিদের এনআইডি দেওয়ার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ইসি। এর আগে ২৩ আগস্ট বেলা ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে আগারগাঁওয়ে ইসির সভাকক্ষে ৮৪তম কমিশন বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৈঠকের এজেন্ডায় ১ জানুয়ারি ২০০৬ সাল বা তার আগে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহকরণের বিষয়টি তোলা হয়।
বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটিতে এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, এটা এখন কমিশন পর্যায়ে রয়েছে। নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে।
কীভাবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে। করোনাকালে কীভাবে কী করা যায় সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। বুধবার এ বিষয়ে আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, ২০০৬-এর আগে যারা জন্মগ্রহণ করেছে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ২০০৪-এর ১ জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের তথ্য সংগ্রহ করা আছে। এখন আরও দুই বছরের করতে হবে।
দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হলো, এটাকে কোন পদ্ধতিতে করা যায়Ñ বিশেষ করে যারা স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী আছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করানো যায় কি না, সে ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
আর যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকবে তাদের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে করানোর একটি বিষয় আছে। এই হলো মোটামুটি পদ্ধতি, সিদ্ধান্তটা হবে এর ওপর। এ ছাড়া কারিগরি বিষয়গুলো টেকনিক্যাল কমিটি দিয়ে করানো হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের অনু বিভাগের ডিজির সিদ্ধান্তের পর আগামী সপ্তাহে আরেকটা মিটিং করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সরকার সব বয়সিকে করোনা টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বর্তমানে ২৫ বছর বয়স থেকে দেওয়া হচ্ছে এই টিকা। ধীরে ধীরে ১৮ বা তার নিচের বয়সীদেরও টিকা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে এনআইডি সার্ভারের সঙ্গে মিল রেখে দেওয়া হচ্ছে টিকা কার্ড। টিকা কার্ড পেতে যেন ১৮ বছরের কম বয়সিদের কোনো সমস্যা পোহাতে না হয়, তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে গত ৯ আগস্ট এনআইডি অনু বিভাগ একটি সভা করেছে। যেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১ জানুয়ারি, ২০০৬ (চলতি বছরের ১১ আগস্ট যাদের বয়স হয় ১৫ বছর ৭ মাস ১০ দিন) বা এর আগে যাদের জন্ম তাদের এনআইডি দেওয়া হবে। অর্থাৎ চলতি মাসে যদি বিষয়টির অনুমোদন দেয় কমিশন তবে ১৫ বছর ৭ মাসের ঊর্ধ্বে যেকোনো নাগরিক এনআইডি পাবে। এনআইডি অনু বিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত ওই সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি ২০০৬ বা এর আগে জন্মগ্রহণকারী নাগরিকদের নিবন্ধন করার লক্ষ্যে তথ্য সংগ্রহের জন্য কমিশনের অনুমোদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি বাস্তবায়ন করবেন এনআইডি অনু বিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার। ইতোমধ্যে এনআইডি অনু বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। কমিশন অনুমোদন দিলে আগামী মাস থেকেই ১৫ বছর ৭ মাসের ঊর্ধ্বে যেকোনো নাগরিক আবেদন করলে পেয়ে যাবে এনআইডি।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনু বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের ডিজি স্যারের একটা প্রস্তাব ছিল, এটি এখনও প্রস্তাব আকারেই আছে, পরবর্তী সময়ে কমিশন হয়তো সিদ্ধান্ত নেবে, এ বিষয়ে আজকে মিটিং হয়েছে। এগুলো আলোচনার মধ্যেই আছে, এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনু বিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর বলেন, এখনও এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা কমিশন মিটিংয়ের পরে হবে, কমিশন যতক্ষণ সিদ্ধান্ত না দেবে ততক্ষণ কিছু বলতে পারব না।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ ২০১৯ সালে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ওই সময় ভোটার হওয়ার উপযোগী (১৮ বছর) নাগরিকের পাশাপাশি ১৬ বছর বয়সীদের (১ জানুয়ারি ২০০৪ বা তার আগে জন্মগ্রহণকারী) আগাম তথ্যও সংগ্রহ করেছিল ইসি। ২০১৯ সালে সংগৃহীত তথ্য থেকে ২০২০ সালে ৬৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৫ এবং ২০২১ সালে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬ জন নাগরিকের তথ্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।