জাতীয়

৫৩ দেশের ৮০টি অবস্থানে এইচএসআই

যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারকারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক

নিউ ইয়র্ক: বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার কোন ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। কূটনৈতিক তৎপরতার অভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিবছর মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার হলেও অদ্যাবধি সরকারিভাবে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার বন্ধে ইতোমধ্যে ৫৩টি দেশের ৮০টি অবস্থানে রয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনস (এইচএসআই) দল। তারা বিভিন্ন দেশের অর্থ অর্থচারকারীদের কড়া নজরদারি রেখেছে। এ জন্য ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)এর আওতাধীন ১০ হাজার ৪ শত কর্মচারির মধ্যে ৭ হাজার ১শ জন বিশেষ এজেন্ট নিয়োগ করেছে এইচএসআই। বিশেষ এজেন্টের কর্মিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২২০টি শহরেও নজরদারি করবেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন (এইচএসআই) নোগালেস অফিসের তদন্ত অনুসারে অর্থ পাচারের তথ্যের মাধ্যমে স্থানীয় এলাকার একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। মেক্সিকোর নাগরিক মার্কো আন্তোনিও মার্টিনেজ সানচেজকে গত সোমবার (২১ মার্চ)  সান্তা ক্রুজ কাউন্টি সুপিরিয়র কোর্টে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযোগ জানা যায়, সানচেজের বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিচয় গোপন করার জন্য ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে ১২ জুলাই ২০১৮ সাল পর্যন্ত ওয়েলস ফার্গো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৭২ হাজার ৪২৩ ডলার জমা দেন। তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মানি লন্ডারিং এবং অবৈধভাবে একটি এন্টারপ্রাইজ পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। আমানত প্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাবরিনা লোচনার এই মামলা পরিচালনা করছেন। আইনে আদালতে দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত সকল আসামীকে নির্দোষ বলে ধরে নেওয়ার দাবি জানান সাবরিনা।

এদিকে, কানাডা থেকে ডা. মুরাদ হাসানের দেশে ফিরে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় সারা দেশে ও প্রবাসে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব ঘটনায় দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী এবং অপরাধপ্রবণ ব্যবসায়ী, রাজনীতিকসহ অনেকেই আতঙ্কে আছেন। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যারা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তা রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
বাংলাদেশ থেকে এরইমধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে অর্থ সরিয়েছেন তারা বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। সামনে যাদের সরানোর পরিকল্পনা রয়েছে, বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারাও। তাদের আশঙ্কার সবচেয়ে বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা। আইনিসহ দ্বিপক্ষীয় বেশকিছু ইস্যুতে সমঝোতা চুক্তিও রয়েছে দেশগুলোর মধ্যে। যেমন কানাডায়ও মার্কিন যেকোনো আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জারি করা যেকোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা বা নিষেধাজ্ঞা সেখানেও কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্য দেশগুলোয়ও এসব কার্যকর হওয়ার অসংখ্য নজির রয়েছে।
টাকা পাচার নিয়ে আন্তর্জাতিক ৪টি সংস্থার রিপোর্টেও বাংলাদেশ থেকে ভয়াবহ আকারে টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাগুলো হচ্ছে-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক, ইউএনডিপি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপার। জিএফআইর রিপোর্ট অনুসারে গত বছর দেশ থেকে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশটিতে বাংলাদেশিদের আমানত সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে ৮৪ জন বাংলাদেশির টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাগুলোর মতে, বাংলাদেশ থেকে যেসব টাকা পাচার হয়, তা যায় উন্নত ৩৬ দেশে। এর মধ্যে উল্লিখিত ১০ দেশ চিহ্নিত করেছে বিএফআইইউ ও দুদক। মূলত এসব দেশেই বড় অংশ পাচার হয়।
দেশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিদেশে টাকা পাচার করেছেন বলে ইতোমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ‘ধীরে চল নীতি’ অনুসরণ করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশি কয়েকজনের অর্থ পাচারের বিষয়টি উঠে আসে। তাদের মধ্যে সরকার ও বিএনপি সমর্থক কয়েকজন ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে। পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে এ ৪৩ জনের নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্যান্ডোরা পেপারসে দ্বিতীয় তালিকায় আট বাংলাদেশির নাম আসে। তাদের বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বিদেশে অর্থ পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশের হাইকোর্টে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে অর্থ পাচারের অভিযোগে ৪৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button