অর্থনীতি

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প: সিডি-ভ্যাট খাতে ব্যয় বাড়ছে ১০৩ কোটি

‘মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার (পিজিসিবি অংশ: মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন)’ প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সংশোধনীতে কাস্টমস শুল্ক (সিডি)-ভ্যাট খাতে ১০৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পটির ওপর গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকল্প যাচাই কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বেশকিছু সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ দেয়। সে অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে তারা। সেখান থেকে সিডি-ভ্যাট খাতে ১০৩ কোটি ব্যয় বাড়ানোর তথ্য জানা গেছে।

পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশন বলেছিল, ‘প্রস্তাবিত আরডিপিতে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি বিশেষ করে জিওবি খাতে ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।’

জবাবে পিজিসিবি বলেছে, প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে সরকার অর্থায়নের আওতায় সিডি-ভ্যাট বিবিধ কর (এআইটি এবং ভ্যাট) এবং কন্টিজেন্সিসহ মোট তিনটি খাতে বরাদ্দ রয়েছে, যার মধ্যে শুধু সিডি-ভ্যাট খাতে ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের সময় ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার মালামালের দামের ওপর কর রেয়াত সুবিধা থাকায় গড়ে ৩০ শতাংশ হারে সিডি-ভ্যাট প্রদান করা হতো বিধায় সে অনুযায়ী ডিপিপিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে রেয়াত সুবিধা রদ করায় বর্তমানে সঞ্চালন লাইনের মালামালের দামের ওপর গড়ে ৪২ শতাংশ হারে সিডি-ভ্যাট প্রদান করতে হচ্ছে।

এছাড়া বাস্তবতার নিরিখে প্রকল্পের আওতায় মাঠ পর্যায়ে আরওডব্লিউ অনুযায়ী বাস্তবায়নাধীন সঞ্চালন লাইনের দৈর্ঘ্য ও টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মালামাল খাতে ব্যয় বেড়েছে। মালামাল খাতের ব্যয়ের সাথে সিডি-ভ্যাট রেট অনুযায়ী সিডি-ভ্যাট খাতেও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে সিডি-ভ্যাট খাতে ব্যয় বেড়েছে ১০৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এই ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই।

অন্যদিকে বিবিধ কর (এআইটি ও ভ্যাট) খাতের ব্যয় প্রকৃত ব্যয় সাপেক্ষে আরডিপিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অন্তর্ভুক্ত করায় সরকারি খাত থেকে বিধি কর (এআইটি ও ভ্যাট) বাবদ ৩ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা কমেছে এবং প্রকল্পের ভৌত কাজ ৬২ শতাংশ সম্পন্ন হওয়ায় কন্টিজেন্সি বাবদ সরকারি খাত থেকে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা কমেছে।

সার্বিকভাবে সিডি-ভ্যাট খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং এআইটি ও কন্টিজেন্সি খাতে ব্যয় কমার ফলে সার্বিকভাবে আরডিপিপিতে সরকারের ৮৫ কোটি ৪৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় পিজিসিবি।

প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে দেখানো হয়েছে, সার্ভে খাতে ৯৩ কিলোমিটারের জন্য খরচ হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ কিলোমিটারের জন্য সার্ভে খাতে সম্ভাব্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে পরিকল্পনা কমিশন।

এ বিষয়ে পিজিসিবির উত্তর, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৯৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মধ্যে ৯৩ কিলোমিটারের সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার সর্বনিম্ন দরদাতার সাতে সম্পাদিত ও অনুমোদিত চুক্তিমূল্য অনুসারে সার্ভে খাতে মোট ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রয়োজন হবে। কিন্তু মূল্য ডিপিপিতে এ খাতে সমপরিমাণ ব্যয়ের সংস্থান না থাকায়, ঠিকাদার চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৯৩ কিলোমিটার সার্ভে সম্পন্ন করলেও শুধুমাত্র ঠিকাদারের দাখিল করা বিল বাবদ ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে এবং আরডিপিপিতে সেভাবেই প্রতিফলন হয়েছে।

অবশিষ্ট অর্থ বাস্তবতার নিরিখে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ কোটি ২২ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ কোটি ২৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা প্রদানের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় হিসাবে দেখানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে পিজিসিবি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button