শাওয়াল মাসের রোজা

শাওয়াল মাস। আরবি দশম মাস। এ মাসের মর্যাদাও অত্যধিক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে ছয়টি রোজা রাখার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের রোজা মুসলমানদের জন্য ফরজ করে দিয়েছেন। এই ফরজ রোজা ছাড়া সুন্নাত ও নফল রোজা রয়েছে। যা পালন করা মুসলিমের জন্য জরুরি নয়। কিন্তু পালন করলে অত্যাধিক ফজিলত পাওয়া যায়।
তাছাড়া মহান রাব্বুল আলামিন ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতকেও বিধিবদ্ধ করেছেন। এটা বান্দার জন্য আল্লাহ তাআলার হিকমত ও অনুগ্রহ। তিনি যে আমল ফরজ করেছেন, অনুরূপ সেই আমল নফলও করেছেন বান্দার জন্য। ফরজ ইবাদতের ত্রুটিগুলোকে নফল ইবাদত বা আমল দ্বারা পূরণ হয়ে যায়। তেমনি নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমলকারীর ছাওয়াব বৃদ্ধি হয়।
হাদিসে এসেছে- কিয়ামতের দিন নফল ইবাদত দ্বরা ফরজ ইবাদতের অসম্পূর্ণতা পূর্ণ করা হবে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদ, মুসতাদরেকে হাকেম)
এই নফল রোজাগুলো আবার দুই ধরনের-
ক. সাধারণ নফল।
খ. নির্দিষ্ট নফল। আর শাওয়াল মাসের রোজা হচ্ছে নির্দিষ্ট নফল রোজা।
যে ব্যক্তির রমজানের রোজা পূর্ণ হয়ে যাবে, তার জন্য শাওয়াল মাসের ৬টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর এতে তার জন্য রয়েছে অনেক ছাওয়াব।
শাওয়াল মাসের রোজার ফজিলতের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখার পর-পরই শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পালন করে সে ব্যক্তির পূর্ণ বৎসরের রোজা রাখার সমতুল্য ছাওয়াব লাভ হয়। (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)
এই ছাওয়াব এই জন্য হবে যে, আল্লাহ বলেন, ‘মান ঝাআ’বিল হাসানাতি ফালাহু আ’শরু আমছালিহা। অর্থাৎ কেউ কোনো ভাল কাজ করলে, সে তার ১০ গুণ প্রতিদান পাবে। (সূরা আনআ’ম : আয়াত ১৬০) অতএব সেই ভিত্তিতে রমজানের ১ মাসের ছাওয়াবের সঙ্গে শাওয়াল মাসের ৬ দিন রোজা রাখলে এক বছরের ছাওয়াব লাভ হয়ে থাকে। এ ভাবেই রোজাদারের জীবনের প্রত্যেকটি দিন রোজা রাখ হয়।
শাওয়ালের রোজার উপকারিতা-
এ রোজা ফরজ নামাজের পর সুন্নাতে মুআক্কাদার মতো। যা ফরজ নামাজের উপকারিতা ও তার অসম্পূর্ণতাকে পরিপূর্ণ করে। অনুরূপভাবে শাওয়াল মাসের ৬ রোজা রমজানের ফরজ রোজার অসম্পূর্ণতা সম্পূর্ণ করে এবং তাতে কোনো ত্রুটি ঘটে থাকলে তা দূর করে থাকে। সে অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটি কথা রোজাদার জানতে পারুক আর নাই পারুক।
তাছাড়া রমজানের ফরজ রোজা পালনের পরপর পুনরায় রোজা রাখার মানেই হল রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি লক্ষণ। যেহেতু মহান আল্লাহ কোনো বান্দার নেক আমল কবুল করেন, তখন তার পরেই তাকে আরও নেক আমল করার তাওফিক দান করে থাকেন। যেমন উলামাগণ বলে থাকেন, ‘নেক কাজের ছাওয়াব হল, তার পরে পুনরায় নেক কাজ করা। (আহকামিস সিয়াম)
এই রোজা রাখার সময়-
শাওয়ালের রোজা রাখার উত্তম সময় হল ঈদের পরের ৬ দিন। কারণ তাতেই রেয়েছে নক আমলের প্রতি ধাবিত হওয়ার প্রমাণ। আর এ কথাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, `যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখার পরে-পরেই শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পালন করে। তবে সে যেন সারা বছরই সিয়াম বা রোজা পালন করল। (তিরমিজি) এ কারণেই একদল আলেম এই ছয় দিনের রোজাকে মোস্তাহাব বলেছেন। হজরত ইবনে মুবারাক বলেন, প্রতিমাসের তিন দিন রোজা রাখার মতো শাওয়ালের ছয় দিন রোজা রাখাও ভালো আমল।
শাওয়ালের রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখায় ফজিলতপূর্ণ। তবে লাগাতার না রেখে বিচ্ছিন্নভাবেও রাখা চলে। এবং শাওয়াল মাস চলে গেলে তা কাযা করা জরুরি নয়। যেহেতু তা সুন্নত এবং তার যথাসময় পার হয়ে গেছে। তা কোনো ওযরের ফলে হোক আর বিনা ওযরে হোক।
জানা থাকা ভাল-
রমজানের রোজার কাযা থাকলে তা পালন না করে শাওয়ালের রোজা রাখা জরুরি নয়। যেমন কাফফারার রোযা না করে শাওয়ালের রোজা রাখা চলে না। আর শাওয়াল মাসে রমজানের কাযা রাখলে তা শাওয়ালের রোজা বলেও যথেষ্ট হবে না।
আল্লাহ আমাদেরকে শাওয়াল মাসের রোজা পালনের মাধ্যমে সারা বছর রোজা রাখার ফজিলত অর্জন করার জন্য তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলাই উত্তম ফজিলত দানকারী। তাঁর কাছেই মুমিন বান্দার বিনীত আবেদন। আমিন।