অর্থনীতি

ব্যাংকের বিলাসিতায় লাগাম দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বিলাসবহুল যানবাহন, আড়ম্বরপূর্ণ সাজসজ্জাসহ বেশ কিছু খাতে খরচ কমাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংক-কোম্পানির অর্থে সম্পদ কেনা ও অফিস স্পেস ভাড়ায় ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী ও অন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি, ব্যাংক শাখার সাজসজ্জা, ব্যাংকের গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, বিজনেস ডেভেলপমেন্টের নামে বাহুল্য খরচ হচ্ছে। বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ডিংয়ে ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। বিলাসি আপ্যায়ন, যথেচ্ছ স্টেশনারি ও বিবিধ খরচের নামেও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে বলা হয়, ৫০ লাখ টাকার অধিক মূল্যের সেডান (প্রাইভেট কার) এবং এক কোটি টাকার অধিক মূল্যের এসইউভি ব্যাংকের টাকায় কেনা যাবে না। তবে ব্যাংকের রেমিট্যান্স বহনের কাজে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা কর্তৃক ব্যবহৃত নিরাপত্তা-যানবাহনের অনুরূপ গাড়ি ক্রয় করা যাবে। অন্য কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লিজ ফাইন্যান্সিং সুবিধা গ্রহণ করে কোন মোটরগাড়ি সংগ্রহ করা যাবে না।

ব্যাংকের অর্থে কেনা মোটরযান বহরে যানবাহনের সংখ্যার প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে হ্রাসপূর্বক ব্যাংকের জনবল ও অফিস/শাখার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে হবে। দেশীয়ভাবে সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান হতে গাড়ি কেনার মাধ্যমে এ খাতে ব্যয়ের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০ ভাগের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। সাধারণভাবে পর্ষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীর জন্য সার্বক্ষণিক গাড়িসহ সব যানবাহন অন্ততঃ পাঁচ বছর ব্যবহারের পর প্রতিস্থাপন করতে হবে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্য পরিচালকরা ব্যাংকের টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না।

সাজসজ্জয় উচ্চ ব্যয় পরিহারের ক্ষেত্রে নতুন শাখা স্থাপন বা বিদ্যমান শাখা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে শহর এলাকায় ৬ হাজার বর্গফুট এবং পল্লী অঞ্চলের শাখার জন্য ৩ হাজার বর্গফুটের ভবন/স্পেস ব্যবহার করতে হবে। আইটি সরঞ্জাম এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়া অন্যান্য খাতে (ভল্ট স্থাপন, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, অফিস ফার্নিচার, ইলেকট্রিক/ইলেকট্রনিক ইত্যাদি) নতুন শাখা স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের জন্য ১ হাজার ৮৫০ টাকার বেশি ব্যয় করা যাবে না

শাখা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের জন্য ১ হাজার ২৫০ টাকার বেশি ব্যয় করা যাবে না বিদ্যুৎ ব্যবহার, আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও বিলাসী ব্যয় পরিহার করতে হবে।

সভা অনুষ্ঠান, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উচ্চ ব্যয় কম করতে হবে। ব্যাংকের টাকায় ঢাকার বাইরে পরিচালনা পর্ষদ, পর্ষদের সহায়ক বিভিন্ন কমিটির সভা অনুষ্ঠান যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। ভ্রমণ ও যাতায়াত ভাতা, অ্যাপায়ন খরচ, স্টেশনারি এবং বিবিধ খরচের নামে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় পরিহার করতে হবে।

স্থাবর/স্থায়ী সম্পদ ক্রয় এবং অফিস স্পেস ভাড়া/ইজারা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত বাজারদর যাচাইপূর্বক প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, মাত্রাছাড়া বাহুল্য ব্যয়ের কারণে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমাতে পারছে না। অন্যদিকে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে নীট মুনাফা কম হওয়ায় প্রত্যাশিত লভ্যাংশ পাচ্ছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডার বা বিনিয়োগকারীরা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button