দুর্যোগ

প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি-শাস্তিতেও থামছে না ত্রাণ চুরি

ত্রাণের চাল আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত, বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়েছে। এরপরও চলছে ত্রাণের চাল চুরি। অন্যদিকে, ত্রাণের দাবিতে চলছে বিক্ষোভ।  সুত্রঃ সংবাদ।

বরিশালে যুবলীগ নেতা মজুদ করেছেন

২০ বস্তা চাল

প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পরেও সরকারি দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা পাতি নেতারা ত্রাণ বা ১০ টাকা মূল্যের চাল চুরি চালিয়ে যাচ্ছেন।

হিজলা উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল মজুদের অপরাধে হরিনাথপুর ইউনিয়নের ডিলার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বিপ্লব খন্দকার কালো বাজারে বিক্রীর উদ্দেশে ২০ বস্তায় ৫৩০ কেজি চাল তার কর্মচারী ইউনুস সরদারের বাড়িতে মজুদ করেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলনা।

গোপন সূত্রে খবরটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম জানতে পারেন। তিনি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান ও পুলিশ বাহিনী নিয়ে ইউনুস সরদারের বাড়িতে হানা দেন। ইউএনওর জিজ্ঞাসাবাদে ইউনুস সরদার স্বীকার করেন তিনি সরকারি ডিলার ও যুবলীগ নেতার কাছ থেকে ওই চাল কিনে নিজের বাড়িতে রেখেছেন। পরে ইউনুস সরদার জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে, তিনি ডিলার বিপ্লব খন্দকারের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইউনুস সরদারকে তিন মাসের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো একমাসের কারাদ- দেন। তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে বরিশাল কারাগারে পাঠিয়েছেন। খাদ্য কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল আত্মসাৎ করার দায়ে ডিলারের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করবেন।

অন্যদিকে, গৌরনদী উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নির্ধারিত মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশষ্য বিতরন কর্মসূচির কালোবাজারে বিক্রীর অভিযোগে ডিলার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি প্রদীপ দত্তসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। অপর দুজন হল চাল ব্যবসায়ী পংকজ সাহা ও ভ্যান চালক শংকর পাল। পংকজ সাহার গুদাম থেকে ৫৫ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান জানান এ ব্যাপারে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য খাদ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বগুড়ায় ৬২ বস্তা চাল উদ্ধার

মঙ্গলবার রাতে পুলিশ গাবতলি উপজেলার দক্ষিনপাড়া ইউনিয়নের উজগ্রাম মগরাপাড়া এলাকা থেকে ১০ টাকা কেজির ৬২ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধারসহ নজরুল ও রুবেল নামে ২ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। কলোবাজার থেকে চালগুলো কিনে গ্রেফতারকৃতদের বাড়িতে মজুদ করে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজার থেকে কিনে মজুদ করার খবর পেয়ে পুলিশ গভীর রাতে অভিযান চালায়। মঞ্জু নামের এক ব্যক্তি চালগুলো তার সহযোগীদের মাধ্যমে মুজদ করে রেখেছিলো। পুলিশ গুটলু নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ৩৩ বস্তা চাল পায়। এ সময় গুটলু পালিয়ে গেলেও সেখান থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই এলাকার নজরুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ২৯ বস্তা চালসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ব্যাপারে গাবতলী থানার ওসি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়ার চলছে।

করিমগঞ্জে ২৫ বস্তা চালসহ এক ব্যক্তি আটক

করিমগঞ্জে ১০ টাকা কেজির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২৫ বস্তা চালসহ এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে। করিমগঞ্জ থানার ওসি মমিনুল হক জানিয়েছেন, করিমগঞ্জ সদরের নয়াকান্দি এলাকার কালোবাজারি বাচ্চু মিয়া ২৫ বস্তা চাল পাচারের সময় চামড়া নৌবন্দর থেকে ১৫ এপ্রিল বুধবার দুপুরে তাকে চালসহ আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে এবং অধিকতর তদন্ত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

বরিশালে ত্রাণের দাবিতে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষের বিক্ষোভ

এদিকে, প্রাণঘাতী করোনায় কর্মহীন হয়ে যাওয়ায় খাদ্যের অভাবে বরিশাল নগরীতে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। বুধবার দুপুরে নগরীর ১নং ওয়ার্ডে ত্রাণের দাবিতে নি¤œ আয়ের ৫ শতাধিক নারী-পুরুষ ঘর থেকে রাস্তায় বেড়িয়ে এসে অবস্থান নেন। তারা সিটি করপোরেশনের ত্রাণ না পেয়ে সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা কাউনিয়া বিসিক সড়কে তারা অবস্থানের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জরুরি খাদ্য সরবরাহের আশ্বাস দিলে দরিদ্ররা ঘরে ফিরে যান।

ভুক্তভোগীরা জানান, কাজ না থাকায় ঘরে ঘরে অর্থের অভাব দেখা দিয়েছে চরমে। স্থানীয় কাউন্সিলর আমির হোসেন বিশ্বাস ত্রাণের স্লিপ দেয়ার নামে নিজের লোকদের ত্রাণ দিচ্ছে। এ কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন তারা। তারা দাবি জানিয়েছেন, প্রশাসনের মাধমে ত্রাণের ব্যবস্থা না করা হলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হবে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার ওসি আজিমুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে এমন আশ্বাস দেয়ার পর তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বিশ্বাস বলেন, তার এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। তার ওয়ার্ডে , নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি হওয়ায় সকলে পাননি। নতুন করে তালিকা করে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button