জাতীয়

এক বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ মওকুফ

তথ্যে দেখা যায়, আলোচিত বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মওকুফ করেছে ৬৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মওকুফ করেছে ৩৬১ কোটি ১১ লাখ টাকা, দেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মওকুফ করেছে ৫৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মওকুফ করা টাকার পরিমাণ ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। একই সময়ে সবচেয়ে বেশি পুনঃতফসিলিকরণ করেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ২০২০ সালে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিলিকরণ করেছে ১০ হাজার ৫০৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো করেছে ২ হাজার ৬৭৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলি ঋণের পরিমাণ ২৭৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো পুনঃতফসিলিকরণ করেছে ৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোর পুনঃতফসিলি করা ঋণের চেয়ে মওকুফ করা ঋণের পরিমাণ বেশি।

মওকুফ করা অন্যায় নয়। কিন্তু সেটা নিয়ম না মেলে কোনো বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে নাকি-সেটা দেখার প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা। সাধারণত ব্যাড অ্যান্ড লস বা মন্দ ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের কৌশল হিসেবে মওকুফ করা হয়। বা সুদ মওকুফ করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্যও মওকুফ বা পুনঃতফশিলি করা হয়। এক্ষেত্রে বারবার একই ব্যক্তি ও শিল্প গোষ্ঠীকে দিলে সেটা অপরাধ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ খোলা কাগজকে বলেন, নীতি মেনে বা বিশেষ ঋণ বিবেচনা করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মওকুফ করতে পারে। কিন্তু মূল ঋণ মওকুফ করা যায় না।
আমানতে সুদ হার মওকুফ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলী।

তিনি খোলা কাগজকে বলেন, এখন আমানতের সুদহার নেই বললেই চলে। এক-দুই পার্সেন্ট। আমানত বিতরণে ৯ শতাংশ হলেও কম নয়। এ কারণে এই করোনা মহামারীর মধ্যেও ব্যাংকগুলো মুনাফা করছে। এতে মওকুফ করার সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু কোন পদ্ধতিতে এটা করছে, কাকে করছে-এটা দেখার বিষয়। ব্যাংকের পরিচালক বা মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে যদি নিজে বা নিজের স্বার্থের অনুকূলে সুদ বা মূল ঋণ মওকুফ করিয়ে নেন তাহলে সেটা ক্রাইম। আদায় করার জন্য একই পার্টিকে বারবার মওকুফ করা হয় এবং টাকা যদি আদায় না হয় তাহলে সেটা অন্যায়। এর মাধ্যমে সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের বঞ্চিত করা হবে। তদন্তের মাধ্যমে এসব ক্রাইমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের।

পুনঃতফসিলিকরণ করার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ৫ থেকে ধরনভেদে ১০ শতাংশ অর্থ ফেরত দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ করতে পারে। বর্তমান সরকার চলতি মেয়াদের শুরুর দিকে খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বিশেষ সুবিধা জারি করে। ঋণের ২ শতাংশ জমা দিলেই ওই ঋণ নিয়মিত বা পুনঃতফসিলি করা যাবে। ২০১৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর মে মাসে সার্কুলার জারি করার বছর পার না হতেই প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিলি বা নিয়মিত হয়ে যায়। ২০২০ সালে পুনঃতফসিলিকরণ হয় ১৩ হাজার ৪৬৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিছু কিছু ব্যাংক পুনঃতফসিলিকরণ করার চেয়ে বেশি মওকুফ করে-এমন চিত্র পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ঋণ বা সুদ মওকুফ করা হলেও মন্দ ঋণে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সঠিক পরিদর্শন করা হলে ভালো হতো। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ব্যাংকগুলোকে পরিদর্শন করতে না পারা, খেলাপি হলেও তা খেলাপি হিসাবে না দেখানোর সুযোগ থাকা এবং প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কারণে সঠিক চিত্র আসছে না। ঋণের সঠিক চিত্র পাওয়া গেলে ব্যাংকিং খাতে কী হচ্ছে তা বোঝা যেত। করোনা মহামারী সে পথটা বন্ধ করে দেখেছে। আর প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে করোনা মহামারী দূর হওয়ার পর।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button