সারাদেশ

বগুড়ার শেরপুরে করোনা সচেতনতায় তৎপর উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতায় তৎপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিয়াকত আলী সেখ। তিনি বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ ও তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার পাশাপাশি তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা ও গণসচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিং-লিফলেট বিতরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পদক্ষেপও নিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, এই উপজেলায় কতজন প্রবাসী রয়েছেন তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই প্রশাসনের কাছে। ফলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের তথ্য সংগ্রহ চলছে। তবে সম্প্রতি বিদেশ ফেরত অন্তত ৩০০জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারা যেন সঠিকভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম-নীতি মেনে চলেন এজন্য প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক কমিটি করা হয়েছে। পাশাপাশি ওইসব কমিটিকে যাবতীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। এছাড়া বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে গত তিনদিন ধরে অভিযান শুরু করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিয়াকত আলী সেখ। এসময় উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের বনমরিচা গ্রামের সৌদি আরব থেকে আসা লিমা আক্তারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখাসহ পৌরশহরের উত্তরসাহাপাড়া, জগন্নাথপাড়া, রামচন্দ্রপুরপাড়া, হাজীপুর, মির্জাপুর, কাশিয়াবালা, মদনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা নিশ্চিত করেন। এছাড়া সরকারি আদেশ অমান্য করে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করায় শহরের সকাল বাজারস্থ চয়েস কোচিং সেন্টারের মালিক মো. লিটনের নিকট থেকে জরিমানাও আদায় করেন।

এদিকে গতকাল শনিবার (২১মার্চ) দিনভর এ উপজেলার বিদেশ ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা একাধিক ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেন। পর্যায়ক্রমে সব প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়া করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পৌরশহরসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। যে কোন সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। করোনাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে না পারে সেজন্য বাজার মনিটরিং এবং জনসচেতনতায় লিফলেট বিতরণও অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ওই লিফলেটে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার, হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার মানা, অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা, পরিচিত-অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে হাত মেলানো বা আলিঙ্গন থেকে বিরত থাকাসহ সচেতনতামূলক বিভিন্ন নির্দেশিকা দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিয়াকত আলী সেখ বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নানাবিধ সমস্যা চিহিৃত করে কাজ করছি। ইতিমধ্যে অনেক বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। তবে জনস্বার্থে পরিচালিত সব কাজে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অনন্য উদ্যোগ নিয়েছেন বগুড়ার শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির। তিনি থানায় প্রবেশ মুখে স্থাপন করেছেন একটি বেসিন। আর বেসিনের পাশেই রাখা হয়েছে স্যাভলোন সাবান ও একটি বিলবোর্ডও। সেখানে লেখা রয়েছে “বেসিনে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে থানায় প্রবেশ করুন”। আর এই কার্যক্রমটি তদারকির জন্য পুলিশের একজন কনস্টেবলকেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি থানায় আসা ব্যক্তিদের হাত ধোয়ার পর ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন। গতকাল শনিবার (২১মার্চ) থানায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয় ডেকোরেটর থেকে সংগ্রহ করে এই অস্থায়ী বেসিন বসানো হয়েছে। এসময় কথা হয় থানায় আসা উপজেলার সাধুবাড়ী গ্রাম থেকে মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি একটি সাধারণ ডায়েরী করতে থানা এসেছেন। তিনি বেসিনে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি পান। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করতে পুলিশের এমন উদ্যোগ অনেককেই উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি থানায় আসা ব্যক্তিদের এই ভাইরাস নিয়ে আরও সচেতন করে তুলবে।

শেরপুর থানায় ডিউটি অফিসার পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক নান্নু মিয়া বলেন, থানায় পুলিশের কাছে সেবা নিতে আসা সবাইকে হাত ধুয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এতে পুলিশসহ আগতরাও অনেকটা নিরাপদ থাকবেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত থানায় আসা কয়েকশ’ নারী-পুরুষ হাত ধুয়ে থানায় ঢুকেছেন বলে জানান তিনি।

শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের মানুষের আগমন ঘটে থানায়। নিজেদের সুরক্ষা এবং সকলকে সচেতন করতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। থানায় প্রবেশের পূর্বেই যেন সবাই স্যাভলোন সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত, মুখ ধুয়ে থানায় প্রবেশ করতে পারে তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে বেসিন। আমরা চাই সকল মানুষ নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হোক। তারপরও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সকল বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সার্বিক খোঁজ খবর এবং পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button