আন্তর্জাতিক

ভুয়া করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট: ইতালির পত্রিকার শিরোনামে বাংলাদেশ

সমগ্র ইতালিতে এই মুহূর্তে টক অব দ্য কান্ট্রি হচ্ছে বাংলাদেশের ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট স্ক্যান্ডাল। গোটা ইতালিতেই এখন বাংলাদেশ থেকে ফেরা যাত্রীদের ন্যাক্কারজনক ঘটনা নিয়ে সমালোচনা চলছে।

দেশটির শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ইল মেসেজেরো (দ্য মেসেঞ্জার) আজ প্রধান শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশ থেকে ভুয়া করোনার সার্টিফিকেট’। অনুরূপ শিরোনাম করেছে আরেক প্রভাবশালী দৈনিক লা নুয়োভা। এছাড়া দেশটির ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমেও এখন প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে কিছু বাংলাদেশির কারণে ইতালিতে নতুন করে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার বিষয়টি।

কঠোর ভাষায় লেখা সম্পাদকীয় কলামেও বাংলাদেশিদের নজরদারির আওতায় আনার জন্য দাবি তোলা হচ্ছে। এদিকে আজ কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে রোম বিমানবন্দরে অবতরণের পর উড়োজাহাজে থাকা ১২৫ বাংলাদেশিকে নামতে দেওয়া হয়নি বলে ইল মেসেজেরো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের খবরে জানানো হয়েছে।

ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে খবরে বলা হয়, জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রয়োজন নেই এমন সব বাংলাদেশিকে এই ফ্লাইটেই ফেরত পাঠানো হবে। এয়ারলাইন সংস্থার ভাষ্য, তারা যাত্রীদের দোহা থেকে নিয়ে এসেছেন। এতে কোনো নিয়ম ভঙ্গ হয়নি।

ইতালিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক নাজমুল হোসাইন আওয়াজবিডিকে বলেন, কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এনেছে ইতালি। গত কয়েকদিনে যত ফ্লাইট বাংলাদেশ থেকে এসেছে তার প্রায় সবগুলোতেই কেউ না কেউ কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।

এখানে পরীক্ষায় যাদের করোনা ধরা পড়েছে তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন। এতে ইতালিতে নতুন করে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তেমনি বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মানহানি হয়েছে। ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক’ বাংলাদেশি যাত্রীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথা জানানোর পর সাত দিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়।

সাংবাদিক নাজমুল আরও বলেন, ইতালিতে লকডাউনের শুরুর দিকে যারা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন তারাই এখন ইতালিতে ফিরছেন। চাকরি বাঁচাতে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করে বিশেষ ফ্লাইটের টিকিটে তারা ফিরছেন। কিন্তু কিছু প্রতারকের জন্য এখন প্রবাসী সবাইকেই বিপদে পড়তে হলো। বাংলাদেশ থেকে আসা কেউ কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ করে বাইরে বের হলেই তিন মাসের কারাদণ্ডের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

ইতালিতে বাংলাদেশিরা কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে নাজমুল বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে ‘করোনাভাইরাস আমদানি’ নিয়ে ইতালির গণমাধ্যমে আলোচনা চলছিল। গতকাল থেকে এটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। কর্মঠ হওয়ায় বাংলাদেশিদের সুনাম ছিল। এখন স্থানীয়রা আমাদের সুনজরে দেখছে না।

গত মার্চে চীনের নাগরিকরা ইতালিতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। চীন থেকে ভাইরাসটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ায় এমন ঘটনা ঘটছিল। এখন অনেক বাংলাদেশির সঙ্গে সেরকমটা ঘটছে।

এদিকে বিশ্ববিখ্যাত ইয়াহু নিউজের পার্টনার ‘ইয়াহু ফিনাঞ্জা’ লিখেছে, বাংলাদেশে জ্বর নিয়েও দেশ ছাড়তে মাত্র ৩৬ ইউরো বা সাড়ে তিন হাজার টাকার প্রয়োজন। বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ চিকিৎসকরা ভুয়া ‘করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট’ বানিয়ে দেন যা দিয়ে বিমানবন্দরের চেক পার হয়ে দেশত্যাগ করা যায়।

পত্রিকাগুলোতে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ লোকদের সরাসরি দায়ী করা হয়েছে কোভিড-১৯ টেস্ট না করিয়ে নগদ অর্থের বিনিময়ে করোনা না থাকার ভুয়া সার্টফিকেট ধরিয়ে দেয়ার জন্য।

খবরগুলোতে বলা হয়, গত ৬ই জুলাই বাংলাদেশ হতে বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে ইতালি ফিরে আসেন ২৭৪ জন যাত্রী। সেদিন রাজধানী রোমের প্রধান বিমানবন্দর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি’র ৫ নাম্বার টার্মিনাল ফিল্ড হাসপাতালে রূপ নেয় শুধু বাংলাদেশ থেকে আসা চার্টার্ড ফ্লাইটের যাত্রীদের তাৎক্ষণিক টেস্ট করাতে।

সেখানে ৩৬ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। তাদের কাছে ছিল জাল সনদ। ওই ৩৬ যাত্রীর আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয় এবং বাকিদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য পাঠানো হয় অভিজাত হোটেলে।

ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্তো স্পেরাঞ্জা গতকাল জরুরী নোটিশে জানিয়েছেন এক সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি ডি মাইও এমন পরিস্থিতির কঠোর সমালোচনা করছেন। এদিকে ইতালির সাধারন জনগণও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সাথে ফ্লাইট যোগাযোগ কেবল এক সপ্তাহ নয়, কয়েক বছরের জন্য বন্ধের দাবী তুলেছে তারা।

বিরোধী দলগুলোও সরকার এবং বিদেশী অভিবাসীদের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করা রাজনৈতিক দলগুলোর বিপক্ষে ব্যাপক জনরোষ জাগিয়ে তুলছে।

ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবেশের ঘটনা শুধু ইতালি নয়, যে কোন দেশেই বাংলাদেশীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button