স্বাস্থ্য

অধিক লেবুতে সুস্বাস্থ্য নয়, হচ্ছে শরীরের ক্ষয়!

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই যেন নিজের কাছে অপরিচিত লাগছে। চেহারার লাবণ্য হারাচ্ছে বয়সের ছাপে বুঝতে পারছেন। ওজন বেড়েছে তিন মাসে কয়েকগুণ। ওজন কমিয়ে কীভাবে আগের রূপে ফিরে আসা যায় সে নিয়ে ভাবলেন অনেক কিছু। শুরু করলেন ডায়েট। আর এই ডায়েটের প্রধান উপাদান হিসেবে রইল লেবু। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস গরম পানিতে একটা লেবুর রস মিলিয়ে খেয়ে ফেললেন। সবই ঠিকঠাক যাচ্ছিল। বিপত্তি বাঁধল যখন অনুভব করলেন লেবুতে হয়ত ডায়েটে সাহায্য হচ্ছে কিন্তু শারীরিকভাবে অন্য সমস্যাও হচ্ছে। যেমন, গ্যাস, অ্যাসিডিটি, ক্ষুধামন্দা, বমি ইত্যাদি।

আমাদের শরীরের জন্য লেবু খুব উপকারী, লেবুতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ আমাদের ত্বক ভাল রাখে, দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। লেবুতে অনেক উপকার আছে সত্যি কিন্তু অতিরিক্ত খেলে তা আবার ক্ষতির কারণ।

বেশি লেবুতে ক্ষতি কেন? চলুন জেনে নিই কারণগুলো-

দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়:

নিয়মিত লেবু খাওয়ার উপকার রয়েছে। তবে অতিরিক্ত খেলে লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড থেকে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দাঁতের উপর সাদা এক ধরণের স্তর পড়ে যায়। ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ডেন্টাল এন্ড ক্র্যানোফেসিয়াল রিসার্চ (National Institute Of Dental and Craniofacial Research) থেকে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সফট ড্রিংক খেলে আমাদের দাঁতের যেমন ক্ষতি হয়, অতিরিক্ত লেবুতেও ঠিক এমন ক্ষতি হয়। রোজ সকালে উঠে যারা লেবু পানি খান তাদের দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করা উচিত তাহলে সাইট্রিক এসিডের প্রভাব দাঁতের উপর থেকে কমে যাবে।

এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেলে মুখের ভেতর থাকা নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সেখান থেকে ফোঁড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শুধু লেবু নয়, সাইট্রিক এসিড সমৃদ্ধ যে কোনও ফল খেলেই এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উৎসেচক ভেঙে যায়:

রোজ সকালে খালি পেটে লেবু-পানি খাওয়াতে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভেঙে যায়। পেপসিন আমাদের হজম প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে। আর লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড এই প্রয়োজনীয় পেপসিনকে ভেঙে ক্ষতিকর এক ধরণের এনজাইম তৈরি করে। আর এই ক্ষতিকর এনজাইম খাবারকে সঠিকভাবে হজম হতে দেয় না। আর এর কারণে বেড়ে যায় পেপ্টিক আলসারের সম্ভাবনা। লেবু ছাড়া যে কোনও অ্যাসিড সমৃদ্ধ ফলও পেপ্টিক আলসারের জন্য দায়ী।

বমির সম্ভাবনা বাড়ায়:

শরীরের জন্য ভিটামিন ‘সি’ বেশ জরুরী। কিন্তু অতিরিক্ত লেবু কখনোই ভাল নয়। লেবুর রস বেশি খেলে অ্যাসিডের পাশাপাশি বাড়তে পারে বমিভাব। আর বারবার বমিভাবে শরীরে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের সমস্যা। শুধুমাত্র লেবুই নয়, যে কোনো ধরণের ডিটক্স ডায়েট ড্রিংক থেকেও এ সমস্যা হতে পারে।

ব্লাডারে চাপ পড়া:

গরম পানিতে লেবু মিলালে তা ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে কিন্তু সাথে সাথে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। যেমন, পেট ফেঁপে যাওয়া, শরীর অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়া, বারবার প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি। বারবার বাথরুমে যতে হয় বলে শরীরে থাকা ইলেকট্রোলাইটস ও সোডিয়াম বের হয়ে যায়। আর চাপ পড়ে ব্লাডারে। এছাড়াও পটাসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে শরীরে।

আয়রনের মাত্রা বাড়ায়:

রক্তে আয়রনের প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু তা যদি অতিরিক্ত বেড়ে যায় শরীরের ক্ষতি হয় তখনই। লেবুতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ রক্তে আয়রনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আর এতে ক্ষতি হয় অভ্যন্তরীণ অঙ্গের।

বাড়ায় মাইগ্রেন:

লেবুতে থাকা সাইট্রাস মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ায়। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাদেরকে লেবুজাতীয় ফল না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সানবার্ন হয়:

লেবু খেয়ে রোদে বের হলে অনেকের শরীরে লাল র‍্যাশ দেখা যায়। লেবুতে যে অনেকের অ্যালার্জি রয়েছে এটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। লাল র‍্যাশের পাশাপাশি শরীরে অনেক সময় কালো ছোপও দেখা যায়। একে সানবার্ন হিসেবে জানা যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় এর নাম সাইটোফটোডার্মাটাইটিস।

লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে সূর্যালোকের বিক্রিয়া হয়। সে বিক্রিয়াতেই সানবার্নের সমস্যা দেখা যায়। এমনকি অতিরিক্ত লেবুর রসের কারণে স্কিন ক্যান্সারও হতে পারে।

জেনে রাখা ভাল:-

ক্যালসিয়াম বা অন্য কোনো ওষুধের সঙ্গে লেবু বা সাইট্রিক অ্যাসিড জাতীয় কোনো ফল খাওয়া উচিত নয়। এতে ভালোর চেয়ে খারাপ হবে বেশি। সম্প্রতি জাপানের এক সমীক্ষায় জানা যায়, ওষুধ চলাকালীন ফলের জুস এড়িয়ে যেতে পারলে ভাল হয়। নইলে ফলের জুস আর ওষুধের বিক্রিয়ায় শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

প্রতিদিন কী পরিমাণ লেবু খেলে ভাল:-

– প্রতিদিন লেবু বা লেবুর রস মিলিয়ে ১২০ মিলিলিটারের বেশি খাওয়া উচিত নয়।

– গর্ভবতী মায়েদের যদি দুগ্ধ জাতীয় খাবারে সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সকালে গরম পানির সাথে লেবু খাওয়া উচিত নয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button